জরিনা খালা(রম্য)


বন্ধুরা আমি লেখাটা টয়লেটে বসে লিখেছি, আমিও কনফিউজড পানি কোন দিক দিয়ে বের হচ্ছে।

.

জরিনা খালা সকালে পা চেগিয়ে সোফায় বসে পেপার পড়ছে।

ঘৃন্না লাগে এসব দেখলে!

 

ধমকের স্বরে বললাম,

যাও জরিনা খালা এক কাপ চা নিয়ে আসো , আর পেপারটা এদিকে দাও!

 

আই চা আনিত হাইত্তান্ন! আন্নে যাইয়া লই আইয়েন। আর পা ব্যাথা করার!

 

গতকাল বলছিলা কোমর ব্যাথা করায়। আজকে পা! তাই না!

রুপন্তীর আম্মু কই গেলা! জরিনা খালা কি শুরু করছে? প্রতিদিন তার কোন না কোন রোগ থাকে। এভাবে হলে তো আরেকজন খোঁজতে হবে।

 

জরিনা খালা রাগ করে কইলো,

হ খোঁজেন! আই চলি যামু!

 

রুপন্তীর আম্মু আমারে ধমক দিয়ে বললো,

আপনি চুপ করেন। আপনি জানেন এখনকার যুগে জরিনা খালার মতো কাজের বুয়া পাওয়া সাহারা মরুভূমিতে পানির সন্ধান পাওয়ার মতো।

 

এবার রুপন্তীর আম্মু এক গ্লাস দুধ এনে জরিনা খালারে দিল।

এই নেন জরিনা খালা দুধ খান।

 

আচ্ছা তুমি হলেও আমাকে এক কাপ চা দাও!

 

দুধ শেষ! যা আছে জরিনা খালারে দিয়া দিছি।

 

দুপুরের দিকে দেখি জরিনা খালা আমার ইজি চেয়ারে বসে দম ফুটানো হাসির কৌতুকের বই পড়ছে। আর জোরে জোরে হাসছে,

 

ও হ্যালো এতো হাসির কি আছে, ফ্লোরে কতো ময়লা! এগুলো কে মুছবে?

 

ভাইজান আই বইসতে হাইরতেছি না! পেট ব্যাথা!

 

রুপন্তীর আম্মু একটা ঝাড়ু এনে আমার হাতে দিয়ে বললো, সারাদিন কোন কাম নাই খালি ঘুরেন। এই নেন ঝাড়ু দেন পুরো ঘর।

 

আমি দাঁতে দাঁতে চেপে ধরে কোনরকম ঝাড়ু দিলাম।

 

রুপন্তীর আম্মু দেখলাম রান্না করে,

সোফায় বসে টিভি দেখা জরিনা খালারে বললাম, দেখো কতো কষ্ট করতেছে রুপন্তীর আম্মু তুমি তারে গিয়ে একটু হেল্প তো করতে পারো!

 

ভাইজান আর গ্যাসার চুলায় এলার্জি আছে। আন্নি যান।

 

আচ্ছা ওই যে বাসন প্লেট গুলা তো ধুয়ে দিতে পারো! নাকি?

 

ভাইজান হানি ধরিলে আর ঠান্ডা লাগে।

 

তোমার আর কোন রোগ বাকি আছে?

তা তুমি কি পারবা?

রুপন্তীর আম্মু জরিনা খালারে বিদায় করো! এখনি,

 

জরিনা খালা দেখি কেঁদে দিলো,

আল্লাগো এতো বছর তাগো ঘরে আছি হেতেরা আরে বালুবাসেনা।

 

রুপন্তীর আম্মু কিছু না বলে চুপচাপ রুমে চলে গেল। একটু পর রুম থেকে একটা ব্যাগ এনে আমাকে দিয়ে বললো, আপনি বের হন। জরিনা খালা এই ঘরে থাকবে।

এই নেন জরিনা খালা দুধটুকু খেয়ে নেন। এই লোকের কথা শুনিয়েন না।

 

সন্ধ্যায় রুপন্তীর আম্মুর বান্ধবীরা আসছে। জরিনা খালা সোফায় এখনো বসে আছে। আমি নাস্তা, চা পানি এগুলো নিয়ে আসতেছি। বান্ধবী গুলোরে আগে কখনো দেখিনি রুপন্তীর আম্মুর স্কুল বান্ধবী।

হঠাৎ এক বান্ধবী রুপন্তীর আম্মুকে বললো,

 

তোদের ঘরে ছেলে চাকর রাখছস নাকি?

 

আমি চোখ মুখে লাল করে ফেললাম। জরিনা খালা মুখ লুকিয়ে হাসছে।

রুপন্তীর আম্মু বললো, না না ইনি আমার জামাই!

 

বাহ, এমন জামাই পাওয়া কপাল। ঘরের সব কাজ করে দেখি। আচ্ছা তোর জামাইরে পার্ট টাইম আমার বাসায় কাজে পাঠাতে পারবি? খালি বাসন প্লেট ধুয়ে দিলে হবে। মাসে ছয় হাজার দিবো। বুঝিস তো এখন কাজের বুয়া পাওয়া খুব কঠিন।

 

রুপন্তীর আম্মু বলে দিল, হ্যা যখন খুশি নিয়ে যেও। সারাদিন বাসায় বেকার পড়ে থাকে।

 

অপমান আমার সহ্য হচ্ছে না। তাই আমি রুমে চলে গেলাম।

এই সবি জরিনা খালার জন্য। হেরে একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে।

 

মোড়ের ডিসপেনসারিতে গেলাম,

ভাইজান এমন একটা ঔষুধ দাও যেটা খাইলে জীবনের বাকি সময় টুকু টয়লেটে থাকা লাগে। একেবারে লুস মুসন হয় যেনো। কাকপক্ষীও যেনো কনফিউজড হয়ে যায় পানি কোন দিক দিয়ে বের হচ্ছে।

 

দোকানদার মুচকি হেসে বললো, ঠিক আছে! এই নেন এটা সবচেয়ে কাজের। দশ মিনিটে একশন দেখাবে।

 

পরেরদিন সকাল দশটা।

জরিনা খালা টেলিভিশনে তার ফেবারিট সিরিয়াল দেখাতে ব্যস্ত। রুপন্তীর আম্মু টেবিলে জরিনা খালার জন্য গ্লাসভর্তি দুধ রেখে দিয়ে চলে গেল।

আমি ধীরে ধীরে একটা ট্যাবলেট টুপ করে দুধের গ্লাসের ভেতর দিয়ে রুমে চলে এলাম।

মনে খুব শান্তি লাগছে। একটু পর জরিনা খালার দৌড়াদৌড়ি দেখমু। আহা কি শান্তি!

 

বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল। কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছি না। টেবিলে উকি মেরে দেখি দুধের গ্লাস খালি। মানে মাছে টোপ গিলেছে। জরিনা খালাকেও দেখছি না। মনে হয় বাথরুমে।

 

কই গেলা রুপন্তীর আম্মু নাস্তা তো দাও। ক্ষিধে পেয়েছে। আজ জম্পেশ খাবার হবে। রুপন্তীর আম্মু দেখলাম গরম গরম পায়েস বানিয়ে নিয়ে আসলো। বেশ চেটেপুটে খেলাম।

রুপন্তীর আম্মু বললো কেমন হয়েছে?

 

বেশ ভালো!

 

হুম! ভাবছি কিছু একটা বানাবো সকালে। পরে দেখলাম জরিনা খালা আজকে দুধ খায় নি। দুধ নষ্ট হবে ভেবে সে দুধ দিয়ে পায়েস বানিয়ে দিয়েছি আপনাকে।

 

বন্ধুরা আমি লেখাটা টয়লেটে বসে লিখেছি, আমিও কনফিউজড পানি কোন দিক দিয়ে বের হচ্ছে। 

 

Comments