অভিমানী দুই


-তোর গায়ে এসব কি ? দেখে মনে হচ্ছে কেউ বমি করে দিছে! বাড়ির আঙ্গিনায় পা দিতেই নুরের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো নুর নাহ?

.
  • (দুই) -তোর গায়ে এসব কি ? দেখে মনে হচ্ছে কেউ বমি করে দিছে! বাড়ির আঙ্গিনায় পা দিতেই নুরের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো নুর নাহার বেগম । নুরের ভাবী। নুরের জন্মের পূর্বেই ওর বাবা মারা গেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। আর ওর মা মারা গেছে ওকে জন্ম দিয়েই। মহিলা নিজের সন্তান কে দেখে যেতে পারেন নি। সেই থেকে নুর ওর ভাইয়ের সংসারে। ওর আপন ভাই বোন বলতে কেউই ছিল না । এই একমাত্র জ্যাঠাতো ভাই শফিক রহমান। তখন সদ্য বিয়ে করেছে। তার স্ত্রী নুর নাহার বেগম নুরের সব দায় দায়িত্ব কাধে তুলে নিলেন। নিজের নামের সাথে মিল রেখে নাম রাখলেন নুর ইসলাম। এর পর ১৫ বছর কেটে গেছে। শফিক আর নুর নাহার বেগম এখনো কোন সন্তানের বাবা মা হতে পারে নি। তাদের সন্তানের স্থানটা দখল করে আছে নুর। নুর যখন ছোট বেলায় নুর নাহার বেগমকেই মা ডাকতো। পাড়া পড়শির কাছে বেখাপ্পা শোনাতো সে ডাক। ভাবী মা হয় কিভাবে! অথচ প্রত্যেক নারীই যে মাতা, তা তারা ভাবে নি কখনো। আর মা ডাকতে হলে তাকে যে বাবার স্ত্রী হতেই হবে এমন কোন নিয়ম নেই। ভাবী তো মায়ের সমান। তাই নুর নাহার বেগম নুরের মা ডাকটাকে সংশোধন করে আপু ডাকে রুপান্তর করে দিল। সেই থেকে নুর আপু বলেই ডাকে। ভাবীর চেয়ে বোন ডাকটা আপন বেশি! নুরকে সন্তান ও ভাইয়ের আদরে বড় করে তুলেছেন। নুর নাহার বেগমের বাপের বাড়ির অবস্থা ভালো না, দিন আনে দিন খায়! দুটো ভাই তিনটা বোনের দায় দায়িত্ব তার বাপের কধে বোঝা হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া তার বিয়ে দিতে তার বাপের অনেক ঋণ করতে হয়েছে। তাই বিয়ের ক বছর পরেই ছোট বোন সিনথিয়াকে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসে । আর তাতে শফিক মানা করে নি। তখন নুরের ছয় আর সিনথিয়ার বয়স পাঁচ । নুর আর সিনথিয়া সমবয়সী - একসাথেই বেড়ে উঠেছে ওরা একই নারীর স্নেহের ছায়ায় । - বমি! তোর দেবর কলা দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিতে গেছে, আর পাপড়ি ওর কপালে কলা ভেঙ্গেছে, সেই সাথে... বলেই হাসতে শুরু করলো সিনথিয়া। যদিও তখন ওর খারাপ লেগেছিল, কিন্তু বোনের সামনে বলতে বেশ মজাই লাগছে! নুর আগুন চোখে ওর দিকে তাকালেও ওর হাঁসি থামলো না। - কলা ! কলা দিয়ে প্রেমর প্রস্তাব ! বলিস কি? পাপড়ি! খুব সুন্দর নাম তো! মেয়েটা কেমন রে? নুর নাহার বেগম ঠোটের কোনে হাসি। অষ্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া দেবর একটা মেয়েকে কলা দিয়ে প্রেম নিবেদন করেছে, মেয়েটি সেই কলা দিয়ে পিটিয়েছে তাকে - বেশ মজার একটা ঘটনা। কিন্তু তার ঠোটের কোনের হাঁসি স্থায়ি হলো না। -পেত্নী, শাঁকচুন্নি, কূটনি বুড়ি....তুই কখনো আমার সাথে কথা বলবি না। চোখলখুরনি । পাপড়ির সাথে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটার কারনে নুর রেগেই ছিল, সেই তথ্য সিনথিয়া ওর ভাবীর নিকট বলে দিয়েই সিনথিয়া আগুনে যেন কেরোসিন ঢেলে দিল। নুর গালি দিতে দিতে হাতের স্কুল ব্যাগটা দিয়ে সজোরে সিনথিয়ার মাথায় আঘাত করলো। আঘাত করেই রাগে বকতে বকতে ও ওর ঘরে চলে গেল। আঘাতটা সজোড়ে করেছে, সিনথিয়া চিৎকার করে না উঠলেও ওর হাসি মুখ মহুর্তেই কান্নাভেজা হয়ে গেল। নুর নাহার বেগম দেখলেন সিনথিয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে। সময় পেরিয়ে সন্ধা হলো, তার পর রাত। সেই যে নুর ওর ঘরে ঢুকেছে আর বের হয় নি। সিনথিয়াও ওর ঘর হতে বের হয় নি, ঘরের দরজা দিয়ে ও বেশ কিছুক্ষন কান্না করার পর এখনো শুয়ে আছে। রাতের রান্না শেষ করে নুর নাহার বেগম দুজনকে খেতে ডাকলেন। নুর খেতে আসলেও সিনথিয়া আসলো না। সিনথিয়ার কথা সে খাবে না। দুজনে যত রাগারাগি, মারামারি করুক- খবারটা ঠিক এক সাথেই খায়। ওদের একজন না খেলে নুর নাহার বেগম যে উপোস থাকেন তা ওদের জানা। বাধ্য হয়ে নুর সিনথিয়াকে ডাকতে গেল। তবু সে উঠলো না। নুর আবার রাগ করে না খেয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে রইলো। নুর নাহার বেগম স্বামীর আসার অপেক্ষায় বসে রইলো, শফিক ই পারবে সিনথিয়াকে খাওয়াতে, ওর রাগ ভাঙাতে। নুর যেমন তাকে বেশি মূল্যয়ন করে, তেমনি সিনথিয়া ওর বোনের চেয়ে বেশি মূল্যয়ন করে বোন জামাইকে। বাড়ি ফিরে এসে স্ত্রীর কাছে সব শুনে শফিক ডাকতে গেল সিনথিয়াকে। সিনথিয়ার ঘরের দরজায় মৃদ্যু আঘাত করে ডাকতে শুরু করলো। - সিনথি, সিনথি - কি? ঘরের ভিতর হতে জবাব দির সিনথিয়া। - বোন, দরজা খুলে বাহিরে আয়। - কেন? - খাবি না? - না । - কেন ? - এমনি। - আমি কি খাবো না? আমার যে ক্ষুধা লাগছে। - আমি কি খাইতে মানা করছি না কি ? - তুই না খেলে তোর বোনও খাবে না, তোর বোন না খেলে নুরও খাবে না, আর তোরা না খেলে আমি একা কিভাবে খাই বল? বোন, উঠে আয়, রাগ করে না খেয়ে ঘুমালে শরীর খারাপ হবে। সিনথিয়া আর রাগ করে থাকতে পারে না। দরজা খুলে বের হয়ে আসে। শফিক এবার নুরকে ডাকে, কিন্তু নুর ততক্ষনে ঘুমিয়েছে। তাই নুরের কোন সাড়াশব্দ পায় না। তাই বিকালের ঘটে যাওয়া ঘটনা ভুলে সিনথিয়াও ডাকতে গিয়ে দেখে দরজা খোলা। ও ভিতরে ঢুকে নুরকে ডাকে। - ওয় ইবলিশ ওঠ, আপু খেতে ডাকে, ওয়.... - ওমম..., চলবে....
542 Views

Comments