অভিমানী


দেখ, মিস ঘাস ফড়িং আসতেছে । নুর আর সিনথিয়া কোচিং হতে ফিরছিল, নুরের কথা শুনে সিনথিয়া সামনে তাকালো।

.

 ( এক ) - দেখ, মিস ঘাস ফড়িং আসতেছে । নুর আর সিনথিয়া কোচিং হতে ফিরছিল, নুরের কথা শুনে সিনথিয়া সামনে তাকালো। দেখলো পাপড়ি আসতেছে ওদের বিপরীাত দিক হতে ।পাপড়ি যথেষ্ঠ সুন্দরী। অথচ পাট খড়ির মতো চেহারা! হাড্ডিসার শরীরে এক কেজি পরিমান মাংস আছে কিনা সন্দেহ! ঘাস ফড়িং নাম করনে স্বার্থকতা আছে, পাপড়িকে দেখলেই তা বোঝা যায়। ওর স্বাস্থ্যগত কারনেই অনেকে ডাকে পাপড়, কিন্তু নুর আর সিনথিয়ার কাছে সে ঘাস ফড়িং! বিরক্ত হলো সিনথিয়া ভিতরে ভিতরে। এই সময়েই আসতে হলো ওকে ! নুর আর পাপড়ি , ওদের দুজনের মধ্যে দা কুমড়ো সম্পর্ক! দুজন মুখোমুখি হলেই ঝগড়া বেধে যায় কারনে - অকারনে । যা মোটেই পছন্দ করে না সিনথিয়া। এখন এই রাস্তায় ওই মেয়ের সাথে নুর যে কি আচরন করবে সেটা ভেবেই ও শঙ্কিত হলো। শঙ্কিত চোখ আর কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে ও নুরের দিকে তাকালো। - আসতেছে, তো ? তো ! সিনথিয়ার এই শব্দটা নুরকে ভাবনায় ফেললো। 'তো' শব্দটা কি কোন প্রশ্ন? পাপড়িকে ওর ভালো লাগে, রাগলে আরো সুন্দর দেখায়। এ কারনেই মুখোমুখি হলে মেয়েটাকে রাগিয়ে তোলে সে। এ কথা অবশ্য কেউ জানে না। সে যা হোক, এখন ওর ভাবনায় একটা বিষয় খেলা করছে, আজ পাপড়িকে ভীষন রাগাবে ও। সিনথিয়ার 'তো' শব্দটার জবাব পেয়ে গেছে এখন। - তো! ওকে আজ প্রপোজ করবো। - প্রপোজ করবি! কিসের? - প্রেমের। ওর সাথে প্রেম করবো আমি। প্রচন্ড অবাক হলো সিনথিয়া নুরের কথা শুনে। হবেই বা না কেন? এ ছেলের মাথার নাট বল্টু স্ক্রু ঢিলা আছে! তা না হলে যার সাথে ওর দা কুমড়ো সম্পর্ক তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে চায়? পাপড়িকে যদি ও প্রপোজ করে, তাহলে পাপড়ি নির্ঘাত ওকে পেটাবে সিনথিয়া এ ব্যাপারে নিশ্চিৎ। চেহারা ঘাস ফড়িং এর মতো হলে কি হবে - মেয়ে তো নয় যেন দস্যু রানী ! নুরকেও ভালো বলা যায় না, সেও একটা শয়তান। -শোন, তুই ওকে কিছুই বলবি না। যদি বলিস তাহলে আপা আর দুলা ভাইকে বলে দিবো। - দিবি, তোকে কি মানা করেছি না কি! তোর যা খুশি, এখন তোর ব্যাগ হতে একট কলা দে । কোচিং ছুটির পর সিনথিয়া কোচিং এর পাশের দোকান হতে চারটা কলা কিনেছে। বাড়িতে পান্তা খাবে। কলা মেখে পান্তা খাওয়ার স্বাধই আলাদা। তবে ও খুুব অবাক হলো, নুরকে ঠিক বুঝতে পারতেছে না। এই বললো পাপড়িকে প্রোপজ করবে, আবার কলা চাচ্ছে, কেমন যেন ঘোলাটে! - কলা! খেতে চাস ? - না, কাজ আছে। খাবে না, কাজ আছে! খাওয়া ছাড়া কলা দিয়ে কি কাজ সিনথিয়া ভেবে পেলো না । একটা কলা বের করে নুরের হাতে দিল। যা করার করুক। শুধু এই মহুর্তে পাপড়িকে প্রপোজ না করলেই হলো। - এই যে মিস ঘাস ফড়িং, কথা আছে। পাপড়ি ওদের সামনে আসতেই নুর ডাকলো। পাপড়ি থমকে দাড়ালো। ঘাস ফড়িং নামটা ওর মোটেই পছন্দ নয়। রেগে উঠলো সে। অবশ্য একটু আগে ও যখন দুর হতে নুরকে দেখতে পেয়েছিল। মনে মনে প্রার্থনা করেছিল যাতে শয়তানটা কথা না বলে ওর সাথে। কিন্তু প্রার্থনা কবুল হয় নি। থেমে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো নুরের দিকে। - তোকে না কতদিন মানা করেছি আমাকে ঘাস ফড়িং বলবি না। - তাহলো কি বলবো ? শুটকি মাছ না কি পাট খড়ি! - শোন ভালো হচ্ছে না কিন্তু বলে দিলাম। তোর মতো খাটাসের সাথে ঝগড়া করতে চাই না ! কি কথা বলতে চাস, বল । নুর ওর হাতের কলাটা পাপড়ির দিকে বাড়িয়ে দিল। - কলা! বিষ্ময়ে পাপড়ি তাকিয়ে থাকলো নুরের হাতের কলার দিকে। কিছুই বুঝতে পারতেছে না সে নুরের আচরনের হেতু! - হুম কলা নে। তোকে আমি প্রপোজ করলাম এই কলা দিয়ে। গোলাপ দিতাম, কিন্তু জানিস তো গোলাপ সৌন্দর্য ও ভালোবাসার প্রতিক। গাছ হতে গোলাপ ছিড়লে ভালোবাসা আর সৌন্দর্যের অবমাননা হতো। সৌন্দর্য বিনষ্ট হতো। অথচ কলায় সে রকম কোন সমস্যা নাই। বরং কলা পুষ্টিকর ফল। আমার মতো এখন হতে সকলের উচিৎ হবে কলা দিয়ে প্রপোজ করা। এ ক্ষেত্রে যাকে প্রপোজ করা হবে সে কিছুটা পুষ্টি লাভ করবে। এবার কলাটা নিয়ে আমাকে ধন্য কর। - প্রপোজ? কিসের? পাপড়িরর কন্ঠস্বর হতে রাগ আর বিষ্ময় এক সাথে ঝড়ে পড়লো। গাধাটা ওকে কলা দিয়ে কিসের প্রপোজ করতে চাচ্ছে ! ঠাট্টার একটা সীমা আছে। ও চিকন সে জন্য এভাবে.... - প্রেমের প্রপোজাল! তোকে আমি ভালোবাসি। আজ হতে তুই আমার প্রেমিকা। দুজনে আর ঝগড়া করবো না। এখন হতে প্রেম করবো। বুঝেছিস শুটকি! পাপড়ি কি বলবে ভেবে পেলো না। রাগে বিষ্ময়ে ও হতবাক হয়েছে। ওরা সহপাঠী, একই শ্রেনীতে পড়ে - সেই হিসাবে বন্ধু। যদিও ওর সাথে নুরের কোন মিল নেই, সারাক্ষণ ঝগড়া। কিন্তু সেই ছেলেই ওকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। তাও আবার একটা কলা দিয়ে। রাগটা সামলাতে পারলো না। নুরের হাত হতে কলাটা কেড়ে নিয়ে ওটা দিয়েই নুরের মাথায় দুটো আঘাত করলো। কলা ফেটে নুরের মাথা মুখ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়লো। - এটা কি হলো! নুর হতবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো। ও ভাবতেই পারে নি এমনটা করবে পাপড়ি। না সে কিছুই ভাবে নি। শুধু রাগাতে চেয়েছে, কিন্তু এতটা রেগে যাবে! - কি হলো বুঝিস নি ! দাড়া বোঝাচ্ছি... নুরের দুই গালে পাপড়ির দশটা আঙুলের দাগ বসলো। তার পর পাপড়ি ওর পথে হাটা দিল। সিনথিয়া এতক্ষন তাকিয়ে দেখছিল। এবার এগিয়ে এসে নুরের মাথা হতে কলার অংশগুলো ফেলে দিতে শুরু করলো। - কিরে এখন খুশি তো! তোকে মানা করলাম যে ওকে কিছু বলিস না। তুই শুনলি না। এখন... - তুই কি বলেছিলি ও আমাকে থাপড়াবে! তবে কি জানিস ওর হাত দুটো খুব নরম! - তা তো তোর গালে দশটা আঙুলের দাগ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতটা নরম ওর হাত! নুর আর কোন কথা বললো না। শুধু মনে মনে সংকল্প করলো এর শোধ সে নিবে যেমন করেই হোক। সিনথিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নুর কে ও ভালোবাসে, যদিও কখনো তা প্রকাশ করতে পারবে না। কিন্তু নুরের গালে পাপড়ির আঘাত গুলো ওর বুকে এসে লেগেছে। যন্ত্রনা হচ্ছে এখন। চলবে.......

Comments