বাঘ- বাংলাদেশের জাতীয় পশু


বাংলাদেশের দক্ষিণে রয়েছে প্রকৃতির অপার সম্ভার সুন্দরবন।

.

সমুদ্রের কোলঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই বিশাল বন। এখানে রয়েছে যেমন প্রচুর গাছপালা, কেওড়া ও সুন্দরী গাছের বন, তেমনি রয়েছে নানা প্রাণী ও জীবজন্তু। আর এই প্রাণীদের মধ্যে বাঘ বা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থলও এই সুন্দরবন। এই বাঘ দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি আবার ভয়ংকর।

বাঘ কারনিভোরা (Carnivora) বর্গের ফেলিডা (Felidae) গোত্রের বৃহত্তম বনবিড়াল। এটি বাংলাদেশের জাতীয় পশু। বাঘের মাথা গোলাকার ও বেশ বড়। এর চোখের মণি গোল এবং চোখ দুটি উজ্জ্বল হওয়ায় রাতের বেলায় তা জ্বল জ্বল করে বলে অন্ধকারেও বাঘ স্পষ্ট দেখতে পায়। এদের পায়ের তলায় তীক্ষ্ম ও ধারালো নখ থাকে। তা ছাড়া পায়ের তলায় নরম মাংসপিণ্ড আছে, যার ফলে এরা নীরবে চলাফেরা করতে এবং সহজে শিকার ধরতে পারে। এদের গায়ের চামড়া খুবই শক্ত ও ঘন লোমে ঢাকা। বাঘের পেছনের পায়ের জোর বেশি বলে লাফ দিয়ে এরা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। বাঘের দৈর্ঘ্য ১৪০ থেকে ২৮০ সেমি, লেজ ৬০ থেকে ১০০ সেমি এবং কাঁধ পর্যায়ে উচ্চতা ৯৫ থেকে ১১০ সেমি।

বাঘের গায়ের রং গাঢ় হলুদ থেকে লালচে হলুদ। তাতে লম্বা কালো ডোরা। এই ডোরা পেছন ও উরুতেই বেশি থাকে। পেটের দিক সাদাটে। হলুদ রঙের লেজে অনেকগুলো কালো বেড় থাকে। বাঘের বাচ্চাও ডোরাসহ জন্মে। এই ডোরাকাটা দাগের কারণে অনেক দূর থেকে বাঘকে চেনা যায়।

বাঘ অত্যন্ত অভিযোজন দক্ষ জন্তু। উষ্ণ মণ্ডলীয় অরণ্য, ম্যানগ্রোভ জলাভূমি, পত্রমোচী বন সর্বত্রই এরা বসবাস করতে পারে। এমনকি রাশিয়ার তুষার ঢাকা হিমশীতল দূর প্রাচ্যেও বাঘ বসবাস করে। সুন্দরবনে চিড়িয়াখানায়ও এ বাঘ দেখা যায়। মাঘ মাসের শীতের ঠান্ডা এত বেশি যে তাই, অনেকে বলে মাঘের শীতে বাঘও কাপে। । 

জলবায়ু, আবহাওয়া, গাছপালা, বৃক্ষলতা ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলেই দেশের প্রাণীকুল জীবনধারণ করে থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে এরা মিলেমিশে থাকে। বাঘের আটটি উপপ্রজাতির মধ্যে পাঁচটি এখনো জীবিত। রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে বাংলাদেশের সুন্দরবনে। এ ছাড়া ভারত, ভুটান, নেপালসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এর আবাসস্থল রয়েছে।

বাঘ মাংসাশী প্রাণী। এরা সাধারণত গরু, মহিষ, হরিণ, বুনো শূকর, সজারু ইত্যাদি জীবজন্তু শিকার করে। সুযোগ পেলে এরা মানুষও খায়। বড় আকারের একটি বাঘের দৈনিক মাংসের চাহিদা গড়ে ৮-৯ কেজি।

সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। দিন দিন বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। একে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

Comments