গজল এক ধরনের লঘু রাগসংগীত।


কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ভাষায় সার্থক বেশ কিছু গজল লিখে গেছেন।

.

অনুরাগ, বিরাগ, বিচ্ছেদ, আসক্তি, বিরহ, মিলনগজলে নর-নারীর বিচিত্র মনোভাব প্রকাশ পায়। পাশাপাশি স্রষ্টার প্রতি প্রেম, ভক্তি ভালোবাসাও প্রকাশ পায়।

গজলের উদ্ভব পারস্যে (এখনকার ইরান) পারস্য সংগীত থেকেই গজলগানের ধারা ভারতে অনুপ্রবেশ করে। ভারতীয় সংগীতের গজলের দুটি ধারা হচ্ছে হিন্দুস্তানি (উত্তর ভারতীয়) কর্ণাটকি (দক্ষিণ ভারতীয়) দিল্লি লখনউ গজল চর্চার দুটি প্রধান কেন্দ্র।

পারস্যের শ্রেষ্ঠ সাধক কবিরা যে গজল রচনা করেন তাতে গভীর দার্শনিক তত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। ভারতে গজলগানের প্রবর্তন হলে ফারসি, উর্দু অন্যান্য ভাষায়ও প্রচুর গজল রচিত হয়। তাতে রাগসংগীতের মাধুর্য যুক্ত হওয়ায় গজলগান নতুন মাত্রা পায়।

গজলগানে মনকে আপ্লুত করার এক বিশেষ গুণ আছে। সম্রাট জাহাঙ্গীর, সম্রাজ্ঞী নূরজাহান, জওক, আরজু, মীর তাকী মীর, মীর্জা গালিব, নবাব ওয়াজেদ আলী খান, চলচ্চিত্রাভিনেত্রী মীনা কুমারীর অসংখ্য গজলের সন্ধান পাওয়া যায়।

গজলে সুরের চেয়ে কথার প্রাধান্য বেশি। এই গান শৃঙ্গার রসাত্মক এবং এর প্রধান উপজীব্য মানবপ্রেম। গজলের মধ্যে থেকে ১৫টি শ্লোক থাকে। শ্লোককে বলা হয়শের প্রতিটি শেরে দুটি করে পঙক্তি থাকে। তার অর্থ গজল হতে হলে সে কবিতায় ১০ থেকে ৩০টি পঙক্তি থাকতে হবে। দৈর্ঘ্যটা সনেটের মতো নির্দিষ্ট। গানের ভাষায় বললে প্রথম শ্লোকটিকে বলা হয় স্থায়ী। পরবর্তী শ্লোকগুলোকে বলে অন্তরা। প্রতিটি অন্তরা একই সুরে গাওয়া হয়। টপ্পা ঠুমরির মতো গজলগানে মধুর মৃদু স্বভাবের রাগ ব্যবহৃত হয়। সাধারণত কাফি, ঝিঁঝিট, ভৈরবী, পিলু, বারোয়া প্রভৃতি রাগ এবং পশতু দীপচন্দী তালে গজল গাওয়া হয়।

বাংলা ভাষায় গজল রচনার পথিকৃৎ অতুলপ্রসাদ সেন। উত্তর ভারতের লখনউ শহরে থাকার কারণে তিনি এই ধারার সঙ্গে পরিচিত হন। তবে গবেষক প্রাবন্ধিক গোলাম মুরশিদের মতে, সত্যিকার অর্থে বাংলা গজল নজরুলেরই সৃষ্টি, নজরুলের হাতেই তার পুষ্টিলাভ এবং চূড়ান্ত পরিণতি। ১৯২৬ সালের নভেম্বরে নজরুল লিখেছিলেন তাঁর প্রথম গজলবাগিচার বুলবুলি তুই ফুলশাখাতে দিসনে আজি দোল।

476 Views

Comments