নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন।।


FacebookTwitterPinterest
#ঘটনাটা হৃদয়কে নাড়া দিয়ে গেছে।
আপুরা অবশ্য ই পড়বেন…

“একটি হৃদয়স্পর্শী ঘটনা,,,,,
কার্ডিওভাসক্য?

.

#ঘটনাটা হৃদয়কে নাড়া দিয়ে গেছে।
আপুরা অবশ্য ই পড়বেন…

“একটি হৃদয়স্পর্শী ঘটনা,,,,,
কার্ডিওভাসক্যুলার কনসালট্যান্ট প্রফেসর খালিদ আল
জুবায়ের তার এক লেকচারে যে ঘটনাটা তুলে ধরেন তার বঙ্গানুবাদ করতে আমি মাহমুদুর রহমান যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি৷ আশা করি আপনারা আমার ভুল-ত্রুটিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ইন শা আল্লাহ্!

ডাঃ প্রফেসর খালিদ আল জুবায়েরের ভাষায় ঘটনাটি
নিম্নরূপঃ
একদিন আমি আড়াই বছর বয়সী একটি শিশুর উপর অস্ত্রোপচার।করেছিলাম৷ এটা ছিল মঙ্গলবার, এবং বুধবার দিন বাচ্চাটির।স্বাস্থ্য বেশ ভাল ছিল৷

বৃহস্পতিবার সকাল ১১:৩০ মিনিটের সময়…. আমি এ সময়টির কথা জীবনেও ভুলতে পারব না কারণ তখন আমি মানসিকভাবে প্রচন্ড একটা ধাক্কা খেয়েছি৷ সিস্টারদের একজন আমাকে জানাল যে বাচ্চাটির হৃৎপিন্ডের স্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছে৷ আমি দ্রুতবেগে বাচ্চাটির কাছে ছুটে গেলাম এবং তাকে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিটের একটা কার্ডিয়াক মাসাজ দিলাম৷ এই সময়ের মধ্যে তার কোন উন্নতির লক্ষন পরিলক্ষিত হলো না৷ বাচ্চাটিকে সবাই মৃত হিসেবে ধরে নিল৷ কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে আল্লাহ্ সুবহানা তা’য়ালার ইচ্ছায় তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয় এলো৷ আমরা আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনকে ধন্যবাদ দিলাম৷

বাচ্চাটির সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানোর জন্যে
আমি তার পরিবারের খোঁজ করলাম৷ একজন মানুষের জীবন-মৃত্যু যখন দোদুল্যমান অবস্থায় দৃশ্যমান থাকে, তখন সে অবস্থা নিয়ে তারই আপনজনের সাথে আলোচনা করা অত্যন্ত কষ্টকর৷ এক্ষেত্রে একজন ডাক্তারকে দুই কষ্টের মাঝখানে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সেতু নির্মাণ করতে হয় যেন একটির ভাঙনের শব্দে অপরটি ভেঙে না পড়ে৷ তো আমি বাচ্চার বাবাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পেলাম না৷ অবশেষে আমি তার মা’কে পেলাম৷ তাকে জানালাম যে বাচ্চার গলার ভিতরে রক্তক্ষরণই তার হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ৷ কিন্তু এই রক্তক্ষরণ কেন হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই৷ সম্ভবতঃ তার মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ কী মনে হয়- এ কথার উত্তরে একজন মা কী বলতে পারেন? তার কি কান্নায় ভেঙে পড়ার কথা? তার কি আমার প্রতি অভিযোগ উত্থাপন করার কথা? হ্যাঁ, এগুলো করাটাই তার জন্যে স্বাভাবিক ছিল৷ কিন্তু তিনি বললেন,”আলহামদুলিল্লাহ্” এবং তিনি চলে গেলেন৷ ১০ দিন পর বাচ্চাটি আবার নড়াচড়া করতে শুরু করল৷ আমরা আল্লাহ্’র প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম৷ শিশুটির মস্তিষ্কের কার্যক্রমও বেশ স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল৷

১২ দিন পর তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া আবার বন্ধ হলো সেই একই রক্তক্ষরণে৷ আবার আমরা পৌনে একঘন্টার সেই কারডিয়াক মাসাজ দিলাম৷ কিন্তু এবার আর তার হার্ট রেসপন্স করছিল না৷ আমি তার মা’কে জানালাম যে এবার আর বাবুটার বাঁচার তেমন কোন আশা নেই৷ তিনি বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ্! ও আল্লাহ্! যদি তার সুস্থতায় কোন কল্যান নিহিত থাকে, তবে তাকে তুমি সুস্থ করে দাও!” আল্লাহ্ সুবহানা তা’য়ালা যেন সাথে-সাথেই মায়ের দু’আ কবুল করলেন৷ শিশুটির হৃদযন্ত্র চলতে শুরু করল৷

এই একই ঘটনা পর-পর ছয়বার ঘটল এবং প্রতিবারই মনে হচ্ছিল- এখানেই শেষ৷ অতঃপর একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন (আল্লাহ্’র ইচ্ছায়) তার এই রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সক্ষম হলেন৷ এবার তার হার্ট পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে লাগলো৷ এভাবে সাড়ে তিন মাস অতিবাহিত হলো৷ শিশুটি যদিও আরোগ্য লাভ করছিল কিন্তু তার ভিতরে নড়াচড়ার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছিল না৷ তারপর একদিন সে ধীরে-ধীরে নড়তে শুরু করল৷ কিন্তু হঠাৎ করে তার মস্তিষ্কের উপরিভাগে বৃহদাকারের একটা ঘা দেখা দিল যা দুষিত রক্ত এবং পুঁজ দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল৷ আমি এরকমঅদ্ভুত জিনিস আগে দেখিনি৷

আমি তার মা’কে এই অ্যাবনরমাল জিনিসটার কথা জানালাম৷ তিনি পুনরায় “আলহামদুলিল্লাহ্” বলে চলে গেলেন৷ আমরা যত দ্রুত সম্ভব তাকে সার্জিক্যাল ইউনিটে নিয়ে গেলাম যেখানে ব্রেইন এবং নার্ভাস সিস্টেমের উপর সকল ধরণের জটিল চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার করা হয়৷ সেখানে তাকে ভর্তি করা হলো৷ তিন সপ্তাহ পরে ছেলেটি আরোগ্য লাভ করলেও অসাড় হয়ে পড়ে রইল৷ দুই সপ্তাহ পর তার দেহে আরো একটি অদ্ভুত লক্ষণ প্রকাশ পেল৷ তার রক্তে একপ্রকার বিষক্রিয়া দেখা দিল এবং তার শরীরের তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রিতে পৌঁছাল৷ আমি আবারো তার মা’কে রক্তের এই বিপদজনক বিষক্রিয়া সম্পর্কে অবগত করলাম৷

তিনি অত্যন্ত ধৈর্য্যসহকারে সব শুনলেন এবং বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ্! ও আল্লাহ্! যদি তার আরোগ্য লাভের মধ্যে কোন কল্যান নিহিত থাকে তবে তাকে তুমি সুস্থ করে দাও!” শিশুটিকে পরিদর্শন শেষে আমি পাশের বেডে (#৬) গেলাম আরেকটি শিশুকে দেখতে৷ সেখানে গিয়ে দেখি তার মা চিৎকার করে কাঁদছে৷ আমাকে দেখে তার বিলাপের মাত্রা আরো বেড়ে গেল৷ “ডাক্তার!!!!! ও ডাক্তার!!!!! আমার ছেলেকে বাঁচান!!!!!! একটা কিছু করুন প্লীইইইইজ, আমার ছেলে তো মরে গেলওওওও!!!!” তার ছেলে জ্বরে কাতরাচ্ছিল এবং তার টেম্পারেচার ছিল ৯৯.৬৮ ডিগ্রি৷ আমি খুব আশ্চর্য হয়ে তাকে বললাম, “আপনার পাশের বেডের (#৫) বাচ্চাটির জ্বর ১০৬ ডিগ্রি, তবু তার মা কত ধৈর্য্যশীল এবং তিনি তারপরেও আল্লাহ্’র প্রশংসা করছেন৷” উত্তরে উত্তেজিত মহিলা বললেন,”ঐ মহিলা তার বাচ্চার প্রতি উদাসীন৷ তাছাড়া ঐ মহিলা খানিকটা অপ্রকৃতিস্থও বটে৷ সেই মুহূর্তে আমার রাসূল (সাঃ) এর সেই বিখ্যাত হাদীসটির কথা মনে পড়লঃ “Blessed are the strangers” মাত্র দু’টি শব্দ….. কিন্তু ওয়াল্লাহি, এই দু’টি শব্দ পারে একটি পুরো জাতিকে পরিবর্তন করতে৷

আমার ২৩ বছরের ডাক্তারি জীবনে আমি এরকম ধৈর্যশীল কোন সিস্টারকে আজ পর্যন্ত দেখিনি৷ যাই হোক আমরা তার ছেলেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষন ও যত্নের সাথে চিকিৎসা ও সেবা দিতে লাগলাম৷ এভাবে সাড়ে ছয় মাস অতিবাহিত হবার পর অবশেষে শিশুটিকে সেই রিকভারী ইউনিট থেকে বের করে আনা হলো৷ নীরব-নিথর, মূক ও বধির ছেলেটির মুখে এমনকি নেই কোন অভিব্যক্তির চিহ্ন৷ তার বক্ষদেশ উন্মুক্ত যার ভিতরে তাকালে দেখা যায় তার ছোট্ট হৃদয়ের ধুকপুকানি৷ ছেলেটির মা প্রতিদিন তার ক্ষতস্থান যত্নসহকারে ড্রেসিং করেন৷ তার ভিতরে নিরাশার কোন ছাপ কখনোই দেখা যায় না৷

আপনি কি এর পরের ঘটনা অনুমান করতে পারেন? যে শিশুটির জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এমন ভয়াবহ মরণব্যাধির আক্রমণে জর্জরিত, তার ব্যাপারে আপনি হলে কতটুকু আশাবাদী হতেন? শিশুটির মায়ের এই প্রতিনিয়ত উৎকন্ঠা ও দীর্ঘ যন্ত্রণাময় পথপরিক্রমাকে আপনার কাছে কী মনে হয়? আপনি হলে এক্ষেত্রে কতটা শক্ত থাকতে পারতেন? কত মজবুত আপনার ধৈর্যের বাঁধ? ছেলেটার মায়ের এ অবস্থায় তার রবের কাছে দু’আ করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না৷ আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, রবের কাছে দু’হাত তুলে দু’আ করাটাকে তিনি “অগত্যা কী আর করা!” হিসেবে নেননি৷ বরং অটল বিশ্বাস এবং সবরের সাথে, বিন্দুমাত্র নিরাশ না হয়ে অনবরত তার সন্তানের জন্য তিনি দু’আ করেছেন৷ আপনি কি জানেন এর আড়াই মাস পরে কী ঘটেছিল? ছেলেটার মায়ের এই অত্যাশ্চার্য গুণে আল্লাহ্ সুবহানা তা’য়ালা অবশেষে ছেলেটিকে সম্পূর্ণরূপে রোগমুক্ত করেন৷ বাবুটা এখন তার মায়ের সাথে ছুটোছুটি করে, দৌড় প্রতিযোগিতা করে এমনভাবে যেন সে কখনোই অসুস্থ ছিল না৷ ঘটনার এখানেই শেষ নয়,

যেটা আমার হৃদয়কে আলোড়িত করেছে, আমার বুক ভেঙে চৌচির করে দিয়েছে, যে কথা শুনে আমার হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে হয়েছে সে ঘটনা এখন বলবোঃ ছেলেটা দেড় বছর পর হাসপাতাল ত্যাগ করে৷ অপারেশন ইউনিটের একজন ওয়ার্ডবয় আমাকে জানায় যে, একজন লোক তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন৷ তারা কে, জানতে চাইলে সে বলল চেনে না৷ সুতরাং আমি তাদের সাথে দেখা করতে গেলাম এবং আমি দেখলাম এ তো সেই ছেলে যার অপারেশন আমি করেছি!

ছেলেটার বয়স এখন পাঁচ বছর এবং তাকে দেখতে মাশাআল্লাহ্ একটা ফুটফুটে ফুলের মত লাগে৷ তাকে দেখে মনে হলো যেন তার জীবনে ওসব কিছু কখনোই ঘটেনি৷ তার সাথে চার মাস বয়সী আরেকটি শিশু সন্তান ছিল৷ আমি তাদেরকে সাদর সম্ভাষণ জানালাম এবং কৌতুকচ্ছলে ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম যে এটা তার তের বা চৌদ্দতম সন্তান কি না? তিনি একটু বিব্রত ভঙ্গিতে হাসলেন যেন তার কোন আচরণে আমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছেন….. অতঃপর বিনীত ভঙ্গিতে বললেন, “এটি আমাদের দ্বিতীয় সন্তান এবং যার অপারেশন আপনি করেছেন সেই আমাদের প্রথম যার জন্ম হয় আমরা সতের বছর নিঃসন্তান থাকার পর৷”

একথা শুনে আমি নিজেকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না, কান্নায় ভেঙে পড়লাম৷ অতঃপর আমি তার হাত জড়িয়ে ধরে তাকে আমার রুমে এনে বসালাম এবং তার স্ত্রী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, “কে এই মহিয়সী যিনি সতের বছর নিঃসন্তান থাকার পরেও তার প্রথম নবজাতকের একটার পর একটা জীবন- মরণ সংকটে শান্ত-অবিচল থেকেছেন? যে পরিস্থিতিতে কোন মানুষের, বিশেষতঃ কোন মহিলার চিৎকার-বিলাপ করে একাকার করার কথা, তিনি তখন আল্লাহ্’র প্রশংসা করেছেন আর সন্তানের আরোগ্য লাভের জন্য একমাত্র আল্লাহ্ র উপর আস্থা রেখে তাঁর নিকট দু’আ করেছেন? এটা কীভাবে সম্ভব? এর উত্তরে তিনি কী বললেন জানেন?

মন দিয়ে শোনেন ভাই ও বোনেরা…. তিনি বললেন, #আমি ঊনিশ বছর আগে বিয়ে করি তাকে এবং এত বছরে কোনদিন তিনি তাহাজ্জুদের নামায বাদ দেননি (শুধুমাত্র নারীদের প্রকৃতিগত সমস্যা ছাড়া), আমি কখনো তাকে গীবত বা গসিপ করতে শুনিনি এবং কখনোই তিনি মিথ্যা বলেন না৷ আমি ঘর থেকে বের হওয়া বা ঘরে ফেরার সময় প্রতিবার তিনি দরজা খুলে হাসিমুখে আমাকে বিদায় কিংবা স্বাগত জানান এবং আমার জন্য দোয়া করেন৷ তিনি যা কিছু করেন- তার প্রতিটা কাজে থাকে পরম যত্ন, ভালবাসা, বিনয় ও নম্রতার প্রকাশ৷

ডাক্তার সাহেব, আমি তার প্রতিটা আচরণে এত বেশি মুগ্ধ……..সব সময় মনে হয় আমি তার যোগ্য নই৷ সে জন্য তার চোখে চোখ তুলে তাকাতে খুব লজ্জা লাগে৷” আমি স্মিত হেসে নড করলাম, বললাম, “এমন গুণবতী নারীর ভাগ্যে আপনার মতই একজন স্বামী থাকা দরকার, এটা তিনি ডিজার্ভ করেন৷””

সুবাহানআল্লাহ,,,,,এই ঘটনা থেকে আমাদের জন্য অনেক অনুপ্রেরনা ও শিখার আছে….

অনুবাদক -মাহমুদুর রহমান।
(সংগ্রহীত

331 Views

Comments