কুতুব মিনার থেকে লাল কেল্লা


দিল্লিতে ভোর। অফিসগামী মানুষের ভিড়। ছোট্ট রাস্তার উপরেই লুচি ও ডালের দোকানে সকালের নাস্তাও জমেছে। ট্যাক্সি নিয়ে চারজন বেরিয়ে পড়লাম বিড়লা মন্দিরের উদ্দেশে।

.

ছিমছাম শহর দিল্লি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তার দু’পাশ কেবলই সবুজ। সিগনালে ট্রাফিক নেই। লাল, সবুজ ও হলুদ বাতিতেই চলছে গাড়িগুলো। রিকশাও চলে তবে সেগুলো নির্দিষ্ট এলাকার ভেতরেই সীমাবদ্ধ। মিরপুর থেকে ধানমন্ডিতে যাওয়ার সুযোগ নেই। মিরপুরের রিকশা মিরপুরের বাইরে যেতে পারে না। এমনই নিয়ম দিল্লিতে।

বিড়লা মন্দির

৩০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম বিড়লা মন্দিরে। মান্দিরের বাইরে হিন্দু ধর্মবলম্বীদের ভিড়। বুঝাই গেল, এটা তাদের তীর্থস্থান। বাইরে থেকে দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এতো সুন্দর কারুকার্য। সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ও অনেকে মন্দিরকে প্রণাম করছে। মন্দিরের সামনেই মিষ্টির দোকান। তাকে সাজানো বাহারি রকমের মিষ্টি। দিল্লি এসেছি আর লাড্ডু খাবো না তা কি করে হয়। ২০ রুপিতে দুই লাড্ডু। সারাদিন অনেকগুলো জায়গা ঘুরে দেখতে হবে। তাই এখানে আর বেশি দেরি করলাম না। পরের গন্তব্য ইন্ডিয়া গেইট।

ইন্ডিয়া গেইট

বিড়লা মন্দির থেকে ৪০ মিনিটের পথ। রাষ্ট্রপতির বাসভবন, বিজেপির প্রধান কার্যালয়, কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের অফিসের পাশ দিয়ে পৌঁছে গেলাম ইন্ডিয়া গেইটে। যে পথ ধরে গেইটে পৌঁছলাম এ পথেই নাকি ভারতের বিজয় দিবসের প্রধান কোচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। দিল্লিতে তখনও কুয়াশা কাটেনি। দূর থেকে ইন্ডিয়া গেইটের পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করা যাচ্ছিল না। কাছে যেতেই দেখা মিললো শহীদদের প্রতি ভারতীয়দের ভালোবাসার এ নিদর্শন। পুরো গেইটের চারপাশেই পর্যটকদের ভিড়। রয়েছে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা। পুরো এলাকা ঘুরে দেখতে দেখতে ক্লান্ত হলেও মিস হয়নি দিল্লির পানিপুরি। ২০ টাকায় এক প্লেট। দেখতে আকর্ষণীয় হলেও খেতে সুস্বাদু মনে হয়নি। কারণ ফুসকার ভেতর কেবলই আলু সঙ্গে তেঁতুল, লেবুর টক। ইন্ডিয়া গেইট থেকে কুতুব মিনার। 

কুতুব মিনার

ঘড়িতে সময় দুপুর ১২টা। কুতুব মিনারে ভারতীয়দের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৩০ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য জনপ্রতি ৫০০ টাকা। টিকিট সংগ্রহ করে ঢুকে গেলাম কুতুব মিনারের ভেতরে। দূর থেকেই দেখা পেয়েছিলাম মিনারের। ভেতরে ঢুকে কাছে যেতেই চিন্তায় এলো সেই মধ্যযুগে এটির নির্মাণ কাজ কীভাবে সম্ভব হয়েছে! কুতুব মিনার এখন পর্যন্ত ইট দিয়ে তৈরি বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনার। পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ ও অজানা কবর। ভেতরে একটি মসজিদও রয়েছে। এছাড়া ছোট ছোট কাঠবিড়ালির আনাগোনা আপনাকে মুগ্ধ করবে। পরের গন্তব্য লোটাস টেম্পল।

লোটাস টেম্পল

কুতুব মিনার থেকে বেরিয়েই দুুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। এখান ভাতের দেখা পাওয়া কঠিন। চিকেন তান্দুরির সঙ্গে রুমালি রুটিতেই খাওয়া শেষ। দিল্লি শহরের এক প্রান্তে লোটাস টেম্পল। এখানে প্রবেশ করতে কোন টিকিট লাগে না। ভেতরে সারি সারি কমলার গাছ। দূর থেকে লোটাস টেম্পল দেখলে সিডনির অপেরা হাউসের কথা মনে পড়বে। হিন্দুদের উপাশনালয় হওয়ায় এখানে স্থানীয়দের ভিড় বেশি। তাই টেম্পলের ভেতরে না ঢুকে চারপাশটা ঘুরে চললাম লাল কেল্লার উদ্দেশে।

লাল কেল্লা

দূর থেকেই লাল কেল্লার দেখা পেলাম। আমাদের লালবাগ কেল্লার কথা মনে পড়ে গেল। কেল্লার মেইন গেইট থেকে খানিকটা দূরেই গাড়ি থেকে নেমে যেতে হয়। এরপর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় টিকিট কাউন্টার। টিকিট নিয়ে লাল কেল্লার ভেতরে। প্রবেশ পথেই নানা রকম তল্লাশি। ভেতরে ঢুকেই নজরে এলো কেল্লা সুপ্রশস্ত প্রাচীর। তবে প্রাচীরের ওপরে উঠার সুযোগ নেই। একটু এগুতেই নিউমার্কেটের মতো সারি সারি দোকান। তবে ক্রেতার দেখা নেই। ভেতরে সুবিশাল সবুজ মাঠ। কয়েকটি পুরনো দালান, মসজিদ। এসব রক্ষণাবেক্ষণে কাজ চলছে। অনেক বিদেশি পর্যটকের ভিড়। রাতের বাসে মানালি। দেরি না করে ফিরে এলাম হোটেলে। পরের গন্তব্য বরফের দেশ- মানালি।

Comments