৩৫০ বছরের পুরোনো ‘জিঞ্জিরা প্রাসাদ’


প্রায় সাড়ে ৩শ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে জিঞ্জিরা প্রাসাদ।

.

মুঘল আমলের নিদর্শন এটি। জিঞ্জিরা-জাজিরার অর্থ হলো আইল্যান্ড বা দ্বীপ। সোয়ারিঘাট সংলগ্ন বড় কাটরা প্রাসাদ বরাবর বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারেই জিঞ্জিরা। এ দ্বীপে ১৬৮৯-১৬৯৭ খ্রিস্টাব্দে জিঞ্জিরা প্রাসাদ ‘নওঘরা’ নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন সুবেদার নবাব ইব্রাহিম খাঁ।

জিঞ্জিরা প্রাসাদ একটি ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি। ঢাকা শহরের বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কয়েকশ গজ দূরে এর অবস্থান। প্রাসাদটি বিশেষভাবে আলোচিত হওয়ার কারণ হলো নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিবারকে এখানেই বন্দি করে রাখা হয়েছিল। মীর জাফরের পুত্র মীরনের চক্রান্তে সিরাজের মা আমেনা, খালা ঘষেটি বেগম, সিরাজের স্ত্রী লুৎফুন্নেছা ও তার শিশুকন্যাসহ সবাই বন্দি হয় এ প্রাসাদে।

ইতিহাসবিদ নাজির হোসেনের ‘কিংবদন্তি ঢাকা’ গ্রন্থে বলা হয়, নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিবারকে দীর্ঘ ৮ বছর জিঞ্জিরা প্রাসাদে বন্দি করে রাখা হয়। মুঘল শাসকদের অনেককে এ দুর্গে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল।

জিঞ্জিরা প্রাসাদকে স্থানীয়রা হাভেলি বা হাওলি বলে থাকেন। প্রাসাদটির নির্মাণশৈলীতে রয়েছে বেশ নান্দনিকতা। প্রাসাদটির নির্মাণশৈলী বড় কাটরার আদলে হলেও কক্ষ ও আয়তন অনেক কম।

এর পশ্চিম অংশে দুটি সমান্তরাল গম্বুজ রয়েছে। আর মাঝ বরাবর রয়েছে ঢাকনাহীন আরেকটি গম্বুজ। প্রাসাদের পূর্বাংশে দোচালা কুঁড়েঘরের আদলে রয়েছে ছাদ। এ ছাদ থেকে একটি সিঁড়ি নেমে গেছে নিচে।

এ প্রাসাদের তিনটি বিশেষ অংশ আজও টিকে আছে। প্রবেশ তোরণ, পৃথক দুটি প্রাসাদ। কয়েক একর জমির ওপর এ প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়েছিল মূলত অবকাশ যাপনের জন্য।

চারদিকে জলরাশির মাঝখানে একখণ্ড দ্বীপ জিঞ্জিরা। নারিকেল-সুপারি, আম-কাঁঠালসহ দেশীয় গাছ ও সবুজের সমারোহ দ্বীপজুড়ে। মুঘল স্থাপত্যশৈলীর অনুপম এক নিদর্শন জিঞ্জিরা প্রাসাদ।

স্থানীয়দের মতে, মুঘল আমলে জিঞ্জিরা প্রাসাদের সঙ্গে লালবাগ দুর্গের যোগাযোগ রক্ষায় বুড়িগঙ্গার তলদেশে একটি সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করা হয়েছিল। এ পথে মুঘল সেনাপতি ও কর্মকর্তারা আসা-যাওয়া করতেন।

লালবাগ দুর্গেও না কি এমন একটি সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। বলা হয়ে থাকে, এ সুড়ঙ্গ পথে যে একবার যায়; সে আর ফিরে আসে না। প্রখ্যাত ব্রিটিশ লেখক জেমস টেইলর তার ‘টপোগ্রাফি অব ঢাকা’ গ্রন্থে নবাব ইব্রাহিম খাঁকে জিঞ্জিরা প্রাসাদের নির্মাতা বলে উল্লেখ করেছেন।

 

 

 

 

Comments