আব্রাহাম লিংকন আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় পেনসিলভানিয়ার গেটিসবার্গে ভাষণ দেন। আব্রাহাম লিংকন ছিলেন আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট। ১৮৬১ সালের ৪ মার্চ থেকে ১৮৬৫ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। গেটিসবার্গের গৃহযুদ্ধে নিহত আমেরিকান সেনাদের যেখানে সমাহিত করা হয়েছিল সেখানে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত ভাষণটি দিয়েছিলেন লিংকন। ভাষণটি দিতে তাঁর লেগেছিল তিন মিনিটেরও কম সময়। শব্দ ছিল মাত্র ২৭২টি। অথচ তার শিহরণ লেগেছিল গোটা বিশ্বে। ১৯ নভেম্বর ১৮৬৩। গেটিসবার্গে দাঁড়িয়ে বিষাদভরা কণ্ঠে লিংকন বলেছিলেন, ‘আজ থেকে সাতাশি বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা এই মহাদেশে জন্ম দিয়েছিলেন একটি নতুন জাতির, স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি স্বাধীন দেশের, যে দেশে সব মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে এবং মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আজ এই ঐতিহাসিক গৃহযুদ্ধ সেই জাতির কিংবা যেকোনো নিবেদিতপ্রাণ জাতির সহনশীলতার জন্য একটি পরীক্ষা। আমরা সেই যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত। আজ আমরা আমাদের সেই যুদ্ধের ময়দানের একটি অংশ সেই মানুষদের চিরনিদ্রার স্থান হিসেবে উৎসর্গ করতে এসেছি, যাঁরা এই জাতিকে রক্ষায় জীবন দিয়েছেন। আমাদের এটি করতেই হবে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘এই শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। ঈশ্বরের কৃপায় এই জাতির নবজন্ম হোক।
রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের অবসান ও মার্কিন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে লিংকনের এই ভাষণকে মাইলফলক বিবেচনা করা হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে গেটিসবার্গ নগরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে সাত হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এর চার মাস পর এই নগরে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট লিংকন রাষ্ট্রের অধীনে ব্যক্তি ও জাতি-গোষ্ঠীর সাম্যের কথা বলেছিলেন। মজার ব্যাপার, সেই সভায় আব্রাহাম লিংকনের বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল না। সভার মূল বক্তা ছিলেন আমেরিকার বিখ্যাত এবং তখনকার সবচেয়ে জনপ্রিয় বক্তা এডওয়ার্ড এভারেস্ট। লিংকনের আগে তিনি দুই ঘণ্টা বক্তৃতা করেন; কিন্তু তাঁর এই বক্তৃতা ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়নি। এভারেস্টের দীর্ঘ বক্তৃতার পর জনতা তুমুল করতালির মাধ্যমে তাঁকে অভিনন্দিত করলেও লিংকনের বক্তৃতার পর তারা ছিল নিশ্চুপ।