১৯৯২ ইং সালে প্রান-প্রিয় দাদীর শিয়রের পাশে আমার নিজ হাতে লাগানো খেজুর গাছটি কালের স্বাক্ষী হয়ে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে ।দাদীকে আমরা বুবু বলে ডাকতাম ।বুবুর আদর- স্নেহ প্রতিনিয়ত আমার মনের দরজায় কড়া নাড়ে ।মায়ের আঁচলের পর বুবুর আঁচলই যেন একমাত্র আশ্রয় স্থল।মায়ের বকুনি, সারের বেত্রাঘাত থেকে রক্ষার একমাত্র ঢাল যেন বুবু ।মায়ের বাপের বাড়ী,বুবুর বাপের বাড়ী,পুরুনো আত্বীয়ের বাড়ী বেড়ানো ,পাড়া বেড়ানো বুবুই যেন একমাত্র সফর সংগী ।মা বাবুই পাখি যেমন তার ছানাকে খাবার তার মুখে পুরিয়ে দেয় তেমনটা ছিল বুবুর বেলায় ।মুখের পানটা সহ চিবিয়ে রস করে খাওয়াতো আমাকে ।এখানেই শেষ নয়,ছেলে বেলার দশ বছর বয়স অবধি পুকুরে ,নদীতে নিয়ে আমাকে গোসল করিয়ে দিত ।কানের প্যাচ আর হাতে-পায়ের আঙ্গুল ডলে ডলে পরিস্কার করত আর বলত মানুষের হাত-পা-কান-মুখ পরিস্কার থাকলে পুরু মানুষটাকেই সুন্দর লাগে।সে কথা আজও আমার কানে বাজে ।বুবুর সেই আমলটি এখনও আমি ধরে রেখেছি ।জিবনে যে মানুষটির মৃত্যু আমার কোলে হয়েছে সে হচ্ছে আমার প্রান-প্রিয় বুবু ।প্রিয় মানুষের মরনকালের দৃশ্য দেখতে হয়েছে আমাকে ,এর চাইতে বেদনার দৃশ্য আর কি হতে পারে ।এখনো ভুলতে পারছিনা সে দৃশ্য । হাত-পা ভাঙ্গা,মচাকা নিয়ে অনেক মানুষ বুবুর কাছে আসতো ঝাড় ফুকের জন্য ।আমি ও খেলতে গিয়ে হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে ফেলেছিলাম অবশেষে বুবুর ঝাড় ফুকে আমার আঙ্গুল আল্লাহর রহমতে ভাল হয়ে গেল ।শরিষার তেল আর কি সুরা যেন পড়ে ফু দিত আমার বুবু , আর এমনি করে ভা্ঙ্গা-মচকা ভাল হয়ে যেত ।পড়ে জানলাম মন্ত্রটি হচ্ছে সুরা ফাতেহা ।ঈমান এবং আমলের সহিত এখনো যদি কেউ পড়ে ফু দেয় তবে যে কোন কঠিন রোগ ভাল হয়ে যাবে -আমি তা মনে প্রানে বিশ্বাস করি ।বাড়ীতে তার অনেক নাতি-নাতনী ছিল সবার চাইতে আমাকেই বেশি ভালবাসত বেশি আদর করতো এতে কোন সন্দেহ নেই । আমি বাড়ীর প্রথম নাতি মনে হয় এটাই আসল কারন ।রাজা-বাদশার গল্প আর শোলক বলে বুবু আমাদের ঘুম পাড়াতো । বুবুর কথা মনে হলে নিরবে -নিভৃত্বে কাঁদি ।কেঁদে কেঁদে ভারী মনটা হালকা করি ।-----------পুকুর পাড়ে নেবুর তলে ,থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে,ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা মাগো ,একলা জেগে রই ।মাগো আমার শোলক বলার কাজলা দিদি কই ।।

Md Abdullah
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?