বাংলার ইতিহাসকে ৯ মাসে সীমাবদ্ধ করার সফলতা আওয়ামীলীগের।

আওয়ামীলীগ ও তদসংস্লিষ্ট বুদ্ধিজিবীদের সবচেয়ে বড় সফলতা বাংলার ইতিহাসকে ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা। ৭১ পরবর্তী ৭২-৭৫ ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে বাকশাল, দুর্ভিক্ষ, গুম-খুন অনেক কিছু চলে আসে। ফলে ৭১ পরবর্তী ইতিহাসের আলোচনায় আওয়ামীলীগ সরাসরি ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এ চলে যায়। আবার ৭১ পূর্ববর্তী আলোচনায় আওয়ামীলীগ ৫২’র ভাষা আন্দোলন ছাড়া তেমন কিছু আলোচনা করে না।পাকিস্তান শাসনামলের ২৩ বছরে উন্নয়নের অসমতা যেমন ছিল আবার অনেক উন্নয়নও হয়েছিল।বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান কাঠামোগত উন্নয়ন পাকিস্তান আমলেই গড়ে উঠা।

এখন অসমতা হোক আর উন্নয়ন হোক তার কিছুটা ভাগীদার আওয়ামীলীগ নিজেও। কারন তত্কালীন আওয়ামীলীগ প্রধান সোহোরাওয়ার্দি অখন্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আওয়ামীলীগের অন্যতম পলিসি মেকার আবুল মনসুর আহমাদ অখন্ড পাকিস্তানের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন।এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী এবং ঢাকার খাজা নাজিমুদ্দিন অখন্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।সে কারনে আওয়ামীলীগের বক্তব্য মূলত ৭১ আর কিছুটা ৫২ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

বঙ্গবন্ধু নিজে পাকিস্তান আন্দোলন করলেও আওয়ামীলীগ পাকিস্তান আন্দোলন নিয়ে, ৪৭ নিয়ে তেমন কিছু বলে না (দেখুন: বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্নজীবনী)।কারণ পাকিস্তান আন্দোলন নিয়ে কথা বলার অর্থ হচ্ছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এবং বর্ণবাদী ব্রাহ্মনদের বিরুদ্ধে কথা বলা। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কিছু কথা বলা গেলেও ব্রাহ্মনদের বিরুদ্ধে কথা বললে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। ফলে ব্রিটিশ শাসনামলের ১৯০ বছর বাংলাদেশের মানুষের উপর অবর্ণনীয় নানা অত্যাচার-নির্যাতন আলোচনার বাইরেই থেকে গেল। যে কারণে একটা জাতির ইতিহাস আটকা পরে আছে ৯ মাসের মধ্যে। অন্যদিকে আওয়ামীলীগ বিরুধীদের ব্যর্থতাও এখানেই, তারাও ইতিহাসকে ওই ৯ মাসের বাহিরে নিয়ে যেতে পারেনি।তারা ইতিহাসকে যেমন ৭১ থেকে উদ্ধার করতে পারেনি, তেমনি ৭১ নিয়ে সত্য-মিথ্যার যেই সংমিশ্রন রয়েছে সেখান থেকেও সত্যটাকে আলাদা করতে পারেনি।

আমরা কি জানি ১৭৬৯-১৭৭৩ এর দুর্ভিক্ষে বাংলার কত লোক মারা গিয়েছিল? আমরা কি জানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য ধান-চাল গুদামজাত করতে গিয়ে দুর্ভিক্ষে কত লোক মারা গিয়েছিল? ১ কোটিরও বেশি মানুষ মারা যায় শুধু বৃটিশ পলিসির কারনে। এসব আমরা জানি না বলেই ৬৬, ৬৯ কারো কাছে অনেক বড় মনে হয়। ইতিহাসের আলোচনায় ৭১ এবং ৫২ যেমন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ ১৯৪৭ এবং ১৯০৫ সাল। একইভাবে ১৮৫৭, ১৭৫৭ এবং ১২০৪ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ন।

একটা জাতির উথ্থান-পতনের সাথে Collective suffering (সমষ্টিগত যন্ত্রণার) এর ইতিহাস সম্পৃক্ত, যার সাথে রয়েছে বর্তমানের সম্পর্ক। সেই জন্য একটা জাতিকে বুঝতে হলে অন্তত হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করতে হয়। ঘুরে-ফিরে যদি এক জায়গাতেই জীবন কাটিয়ে দেই তাহলে সাময়িকভাবে রাজনীতিবিদরা লাভবান হবে আর দেশ বঞ্চিতই থেকে যাবে। আর ইতিহাসের আলোচনা হতে হবে নির্মোহভাবে, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে, অতীত থেকে শিক্ষা নেয়ার উদ্দেশ্যে, সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রনে ঘৃনা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে নয়।

৪৭ সালে বঙ্গবন্ধু ও তার বাবা’র স্বপ্নের পাকিস্তান আন্দোলন সফল না হলে কখনো ৭১ হত না। অথচ ৪৭ এর বিষয়ে আমরা নিরব। বাংলাদেশের বর্তমান সংকটের সাথে ৭১ এবং ৪৭ অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। আমাদের উচিত ৪৭ এবং ৭১ কে সমান গুরুত্ব দিয়ে পাঠ করা এবং ইতিহাসের আরো গুরত্বপূর্ণ অধ্যায়কে (যেমন: ১৮৫৭, ১৭৫৭ এবং ১২০৪) জাতির সামনে তুলে নিয়ে আসা। (http://www.muldharabd.com/?p=215)

সহজ এফিলিয়েট

ঘরে বসে সহজ আয়

ফেসবুক চালাতে পারলেই আয় করতে পারবেন

এখনি শুরু করুন