পাশের বাসার রোদেলা আপুর রুমে বসে বসে ওনার ল্যাপটপে মুভি দেখছি আর ওনার অপেক্ষায় আছি প্রায় আধাঘন্টা ধরে!! সেই যে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফোন দিয়ে এখনো বেরোনোর কোনো নামগন্ধ নেই। উফফ্ কেমন বিপদে যে পড়লাম মনে হচ্ছে দম-টা এখনি বন্ধ হয়ে যাবে। এইদিকে আমার পেটের ভিতরে অলরেডি কান্নাকাটি শুরু হয়ে গিয়েছে!! হঠাৎ বাথরুম থেকে রোদেলা আপুর ভয়ানক চিৎকার শুনে ভয়ে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে গেলাম আর জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম। আন্টি চিৎকার শুনে বুলেটের গতিতে দৌড়ে রুমে চলে আসলো আর তারপর ঘটলো হরর একটি ভিডিও র গল্প!! রোদেলা আপু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বলতে শুরু করলো।...

___ আসলে হয়েছে কি আম্মু ভূতের একটি ভিডিও দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলাম??...(আমতা আমতা করে)

রোদেলা আপুর মুখে কথাটা শুনে আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা করে একটা কাশি দিয়ে রুম থেকে চলে গেলেন। আমিও রোদেলা আপুর ভাব সাব খারাপ দেখে একটা অজুহাত দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে পড়লাম মহাবিপদে আম্মু ছোট বোনকে বলছেন!!...

__ তোর ভাইয়া বাসায় আসুক তারপর না-হয় বাইরে থেকে তোকে ফুচকা এনে দিবো??...

কথাটা শুনে হা হয়ে গেলাম এই ভরদুপুরে ফুচকা কই পাবো। কথাটা ভাবতে না ভাবতেই আম্মু আর ছোট বোনের নজর আমার দিকে পড়ে গেলো। অতঃপর আম্মুর দেওয়া ১০০ টাকা নিয়ে ফুচকার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। যেতে যেতে পথে অবশেষে অচেনা একটা ফুচকার দোকান পেয়ে গেলাম!! ফুচকা নিয়ে বাসায় আসার সময় পিছন থেকে হঠাৎ কেউ একজন চিৎকার করতে করতে দৌড়ে সামনে চলে আসলো। ওমাএএএ এটাতো রোদেলা আপুর ছোট বোন অনামিকা ও এই ভরদুপুরে এখানে কেনো। অনামিকার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম ওর নজর আমার হাতের ফুচকার দিকে। কি আর করার পিচ্চিটা-র হালকা মায়ায় পড়ে সবগুলো ফুচকা ওকে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। এখন আবার যেতে ফুচকা আনতে পকেটে ১০০ টাকা ছিলো বলে বেঁচে গেলাম নয়তো খালি হাতেই বাসায় যেতে হতো। তো অল্পদূর হেঁটে আবার ফুচকা কিনে বাসায় উদ্দেশ্য রওনা দিলাম!! না এবার আর দ্বিতীয় কোনো অনামিকা রাস্তা আটকায়-নি আর যদি ভুলক্রমে আটকায় তো তাহলে এবার নিশ্চিত স্টক করতাম। বাসায় এসে ছোটবোন-কে ফুচকা দিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। বিকেলে রোদেলা আপুর সাথে কফিশপে চলে গেলাম ওনার একটা ফ্রেন্ডের সাথে মিট করতে!! কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর রাএি আপু চলে আসলো আর এসেই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলেন।...

___ কেমন আছেন দুলাভাই?? আমি রাএি চৌধুরী রোদেলার বেস্টফ্রেন্ড।...(হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে)

রাএি আপুর কথা শুনে টাস্কি খেয়ে রোদেলা আপুর দিকে তাকালাম!! ওমাএএএ রোদেলা আপু দেখি চোখ বড়বড় করে রাএি আপুর দিকে তাকিয়ে আছে আর কি যেনো বিড়বিড় করছে। আচমকা ওয়েটার ৩ টা কফি নিয়ে আসলে রোদেলা আপু কিছুটা স্বাভাবিক হলেন কিছু বললেন না। রাএি আপুর কি বিষয়ে যেনো কথা বলে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলেন আর আমি বডিগার্ডের মতো পিছন পিছন আসতে লাগলাম কি আর করার। বাসায় যাওয়ার জন্য রোদেলা আপু একটা রিক্সা ডাকলেন আর রিক্সায় উঠে বসলেন রাএি আপু কে নিয়ে। আমি পইড়্যা গেলাম মাইনক্যা চিপায় এখন আমি কই বসবো!! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ রোদেলা আপু ওনার কোলে বসার জন্য অফার করলেন। অফার-টা পেয়ে আমি তো পুরাই টাস্কি খেয়ে গেলাম এদিকে আমার পকেটে একটা টাকাও নেই তাই চিন্তাভাবনা ছেড়ে দিয়ে রোদেলা আপুর কোলে চড়ে বসলাম। ভাগ্য ভালো রিক্সাটায় মটর লাগানো ছিলো নয়তো রিক্সা ওয়ালা আজ ফেটে যেতো।

কেটে গেলো কয়েক সপ্তাহ রোদেলা আপুর পারসোনাল একটা কাজের জন্য ওনার দেখা পাইনি এতোদিন। কেনো জানি আজ রোদেলা আপু কে ভিষণ মিস্ করছি কোনো একটা টানে। প্রথম যেদিন রোদেলা আপুকে দেখছিলাম ওনাদের ছাদে বিশ্বাস করেন ষাড়েল ভাই সেদিনই ক্রাশ খেয়েছিলাম। ফোন-টা হঠাৎ বেজে উঠায় ভয়ে কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে বাস্তবে ফিরে আসলাম। রোদেলা আপুর ফোন ওনার বাসায় এখনি ১ কেজি মরিচের ফাঁকি নিয়ে যেতে বললেন আমার টাকা দিয়ে বুঝলাম না ব্যাপার-টা। বাজার ঘুরে টাটকা লাল রঙের মরিচের ফাঁকি কিনে রোদেলা আপুর বাসায় চলে আসলাম। আমি আসতেই রোদেলা আপু মুচকি হাসতে হাসতে আমার দিকে চলে আসলেন বুঝতে পারলাম মরিচের টাকা না দেওয়ার ধান্দা।

___ আপু কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতাম!!...(মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো)

___ আগে রুমে আয় তারপর যতো ইচ্ছে জিজ্ঞেস করিস??...

কথাটা বলে রোদেলা আপু তাড়াহুড়ো করে মরিচের ফাঁকি (গুড়া) কিচেনে রেখে আমাকে রুমে আসার জন্য চোখ মারলেন। চোখ মারা দেখে আমি কিছুটা কেঁপে উঠলাম মনে হলো কারেন্টে শকট করেছে। রোদেলা আপুর রুমে এসে আপুকে ডাইরেক্টলি বলে ফেললাম!!...

___ আপু তোমাকে আমার ভাল্লাগে? বিয়ে করবা আমাকে!!...(মাথাটা নিচু করে)

___ সিরিয়াসলি??...

___ হুম!!...

___ বিয়ে করে আমাকে খাওয়াবি কি??...

___ বিড়ি!!...(মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো)

ওমাএএএ বিড়ির কথাটা বলে ফেলায় রোদেলা আপু সেদিনের মতো আবার রেগে ফায়ার হয়ে গেলো তাই ভয়ে দূত গতিতে রোদেলার আপুর রুম ত্যাগ করতে বাধ্য হলাম। এই মেয়েটা একটু অদ্ভুত টাইপের বিড়ির কথা একদমই শুনতেই পারে না। সেদিন শুধু ওনার কাজিন-কে দোকান থেকে বিড়ি এনে দেওয়ার কথাটা রোদেলা আপুকে বলেছিলাম ভুলক্রমে আর তাতেই রোদেলা আপু আমাকে কান ধরে ওঠবস করিয়েছিলো আর আজ তো তাকে বিড়ি খায়াবো বলেছি। সন্ধ্যার দিকে ছাদে মনমরা হয়ে বসে বসে ভাবছি রোদেলা আপু কে কি সত্যিই বউ বানাতে পারবো নাকি ওনি আমার সাথে মজা করে!! এমন সময় রোদেলা আপুর ভয়েস ভেসে আসলো বুঝতে পারলাম আপু ছাদে চলে আসছে।...

___ হ্যাঁ বউ থুক্কু আপু বলো!!...(দুষ্টমি করে)

___ ফাজিল? বউ আবার তুমি করে বলাটা শুরু করলি কেনো আবার।...

___ আমার ইচ্ছে হইছে তাই বলছি এতে তোমার প্রবলেম কি হুম!!...

___ গুড নাইট??...

বলে রোদেলা আপু চলে গেলো ছাদ থেকে আর আমি বোকা চৌধুরী সেজে ছাদেই দাঁড়িয়ে রইলাম আর ভাবতে লাগলাম এটা আমি কোন ধরনের ফান করলাম আপুর সাথে থুক্কু ক্রাশের সাথে সিট্। তিন দিন পর রোদেলা আপুর ফোন আসলো ওনার সাথে মার্কেটে যেতে হবে। চলে গেলাম আপুর সাথে মার্কেটে ওমাএএএ মার্কেটে এসে পইড়্যা গেলাম মহা ঝামেলায় কেনো না আমার এক্স রোদেলা আপুর মামাতো বোন মার্কেটে এসেই শাঁকচুন্নিটাকে দেখা। রোদেলা আপুকে কিছু না বলেই বাসায় চলে আসলাম অপমান হওয়ার ভয়ে। আবার কেটে গেলো তিন দিন এবার যাচ্ছি বড় ভাইয়ের দেওয়া সাহস নিয়ে রোদেলা আপুকে প্রপোজ করতে। কোথায় যাচ্ছি সেটা বলবো না তবে রোদেলা আপুর কাছেই যাচ্ছি এটা পাক্কা!! তো এসে পৌঁছে গেলাম বাসার চিপার ছোটখাটো পার্কে। রোদেলা আপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলছে। তাই আর ওনাকে পিছন থেকে ডাক দিলাম না ডাইরেক্টলি পিছন থেকে হাঁটু গেঁড়ে আই লাভ ইউ বলে প্রপোজ করে দিলাম দু-চোখ বন্ধ করে। সেট্ ওমাএএএ খায়ছে রেএএএএ চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি রোদেলা আপুর বড় ভাই রোদেলা আপুর সাথে দাঁড়িয়ে আছেন আর রোদেলা আপু ভয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এই দৃশ্য-টা দেখে চোখ দু'টো লাফ দিয়ে কপালে উঠে গেলো আমার। নিজেকে বাঁচানোর জন্য একটা কৌশলে খাটিয়ে প্রপোজ-টা রিপলে করলাম।

___ হ্যাপি আপু ডে? আই লাভ ইউ সো মাচ আপু!! দোয়া করি আপনি অনেক বছর বেঁচে থাকেন আমার মাঝে।...

প্রপোজ-টা শুনে রোদেলা আপু সহ তাহার বড় ভাই ঠাস্ করে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো আর আমি ঠাস্ করে স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসলাম। ওমাএএএ তাঁর মানে আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। ছিঃ নোংরা...........!!😀


----------(সমাপ্ত)----------

---ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন---

  • Like
  • Love
  • HaHa
  • WoW
  • Sad
  • Angry