Magazine Cover Image
Magazine Profile Picture
Magazine
@magazine
Catégorie
Divertissement
Traduire   5 années depuis

মেসির সঙ্গে ড. ইউনূস

সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে পৃথিবীজোড়া খ্যাতি রয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। দেশে খুব বেশি সময় থাকার সুযোগ হয় না। এবার তিনি গেলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব বার্সেলোনায়। স্পেনের এই ক্লাবটিতে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীকে বরণ করে নেন লিওনেল মেসি, জেরার্ড পিকেরা। নিজের সাম্প্রতিক গ্রন্থ ‘এ ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস’ নিয়ে স্পেন সফর করছেন গ্রামীণ ব্যাংকের এই প্রতিষ্ঠাতা। এই সফরের অংশ হিসেবে স্প্যানিশ ফুটবল জায়ান্ট বার্সেলোনায় আমন্ত্রিত হন তিনি। সেখানেই বার্সার মহাতারকা লিওনেল মেসি, জেরার্ড পিকেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ইউনূস। ‘ক্ষুদ্রঋণ’ তথা সামাজিক ব্যবসার সম্প্রসারণে ড. ইউনূস সারা বিশ্বে কাজ করছেন। তার মডেল অনুসরণ করে বিশ্বের বহু দেশে গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে সামাজিক ব্যবসার প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। স্পেনের বার্সেলোনাতেও এমন একটি প্রতিষ্ঠান আছে, যার সহযোগী এফসিবি (ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা) ফাউন্ডেশন। এফসিবি ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণেই ন্যু ক্যাম্পে হাজির হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হন বার্সেলোনা ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্ডি মেসত্রি। বার্সেলোনার অনুশীলনে হাজির হয়ে লিওনেল মেসি, জেরার্ড পিকে, এরিক আবিদাল, স্যামুয়েল উমতিতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এরপর ড. ইউনূসের বই ‘এ ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস’র স্প্যানিশ ভার্সন ‘বুক উন মুন্দো দে ত্রেস কেরোস’ হাতে ছবি তোলেন মেসি ও পিকে। আর ইউনূসের নাম সম্বলিত একটি জার্সি তার হাতে তুলে দেন এই তারকা ফুটবলাররা। প্রসঙ্গত, মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এ সময় ড. ইউনূসের হাতে তার নামাঙ্কিত জার্সি তুলে দেন মেসি ও পিকেরা। একটি বই হাতে ছবির জন্য পোজ দিয়েছেন লিওনেল মেসি, জেরার্ড পিকে এবং ক্লাবটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্ডি মেসত্রেরা। জেরার্ড পিকের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন ড. ইউনূস, পাশে দাঁড়িয়ে লিওনেল মেসি ও সহ-সভাপতি জর্ডি মেসত্রে। ড. ইউনূসের লেখা স্প্যানিশ ভাষায় অনূদিত বইটির নাম ‘আন মুন্ডো ডে ট্রেস সেরোস (টহ গঁহফড় ফব ঞৎবং ঈবৎড়ং)।’ ইংরেজিতে অনুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায় ‘অ্যা ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস (অ ডড়ৎষফ ড়ভ ঞযৎবব তবৎড়বং)।’ মূলত এই বইটির প্রচারণার জন্যই বার্সেলোনার হোম গ্রাউন্ডে যান ড. ইউনূস। সদ্য প্রকাশিত এই বইটি নিয়ে ড. ইউনূস স্পেনের বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ এবং ভ্যালেন্সিয়া ফুটবল ক্লাব ভ্রমণ করছেন। ক্রীড়াজগতের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সামাজিক রূপান্ত—রের লক্ষ্যে বর্তমানে কাজ করছেন ড. ইউনূস। বিশ্বের জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা, এই সোশ্যাল বিজনেস সিটির অন্যতম অংশীদার। ড. ইউনূসের ফেসবুক পেজে এ প্রসঙ্গে দেয়া পোস্টে লেখা রয়েছে, ‘এফসি বার্সেলোনা ফাউন্ডেশন হচ্ছে বার্সেলোনা সোশ্যাল বিজনেস সিটির পার্টনার। এ কারণেই ড. ইউনূস তার বই নিয়ে সফর করে এলেন ন্যু ক্যাম্পে। স্প্যানিশ ভাষায় বইটি প্রকাশ করেছে পাইডস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। স্পেনের বার্সেলোনা, মাদ্রিদ ও ভ্যালেন্সিয়ায় একযোগে প্রকাশ করা হয়েছে তার বইটি। তিনি সোশ্যাল বিজনেসে খেলাধুলার প্রভাবকে কাজে লাগানোর জন্য অনেকদূর এগিয়ে গেছেন। এ জন্য তিনি তৈরি করেছেন ইউনূস স্পোর্টস হাব। যার মাধ্যমে খেলাধুলাকে সামাজিকীকরণের কাজ করা হচ্ছে।’ ক্যাম্প ন্যুতে একটি সাক্ষাৎকারও দেন ড. ইউনূস। তার আগে কথা বলেন বার্সা কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে, সহ-সভাপতি জর্ডি মেসত্রের সঙ্গে। এরপরই একে একে বার্সা ফুটবলাররা এসে সাক্ষাৎ করেন ড. ইউনূসের সঙ্গে। এছাড়া বার্সেলোনার অফিসিয়াল পেজে দেয়া পোস্ট রয়েছে একটি ভিডিওর। যেখানে ড. ইউনূস তার বই, এফসি বার্সেলোনায় সফরের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় সবাই বার্সেলোনাকে ভালোবাসে। আমিও সেই কম্যুনিটির একটি অংশ। বাংলাদেশের লক্ষ-কোটি তরুণ বার্সাকে পছন্দ করে। আমি তাদের হয়েই এসেছি এখানে। তারা সবাই বার্সার খেলা উপভোগ করে। ক্লাবের খেলোয়াড়দের ভালোবাসে এবং তাদেরকে নিজেদের হিরো বলে গণ্য করে।’ এ ছাড়া ড. ইউনূস তার সোশ্যাল বিজনেস এবং এখানে কিভাবে খেলাধুলাকে সম্পৃক্ত করা যায় সে সম্পর্কেও কথা বলেছেন।

image
  • Aimer
  • Amour
  • HaHa
  • Sensationnel
  • Triste
  • En colère
Traduire   5 années depuis

'নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বাংলাদেশ পথ হারাবে'-ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন

ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক। সাবেক নির্বাচন কমিশনার। অধ্যাপনা করছেন বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন সাপ্তাহিক-এর। প্রশ্ন তোলেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে। কমিশনের বিদ্যমান আইন এবং কাঠামোতেই নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব হবে বলে মত দেন। এবার নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে সামাজিক অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন এই বিশ্লেষক।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু

সাপ্তাহিক : রাজনীতির আলোচনা এখন নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে। আপনি কমিশনের দায়িত্ব পালন করেছেন। কমিশনের এখনকার ভূমিকা নিয়ে কী বলবেন?
ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচন কমিশন একের পর এক ভুল করছে, আবার তারাই সংশোধন করতে চাইছে। বিএনপি অফিসের ঘটনায় পুলিশকে চিঠি দিয়ে ভুল স্বীকার করল। কমিশন বুঝতে পারল চিঠি দেয়া ঠিক হয়নি।
কমিশন নিজেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সচিব মহোদয় বেশি কথা বলছেন। নির্বাচন কমিশন সচিবের তো এত কথা বলার দরকার নেই। সারাদিন ব্রিফ করতে দেখা যাচ্ছে তাকে। ‘নির্বাচনের দিন পর্যবেক্ষকরা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবে’ বললেন, কমিশন সচিব। এসব কথা কেন? এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থার সংকট তৈরি করবে। বক্তব্য লিখিত হওয়া উচিত।
সাপ্তাহিক : কমিশনের এসব কথায় কী ইঙ্গিত পাচ্ছেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : এসব আলোচনা থেকেই নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে ভুল ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যেমন ধরুন কমিশন বলছে, ‘দুনিয়ার কোথাও শতভাগ সুষ্ঠু ভোট হয় না’। এ তথ্যের ভিত্তি কী? এবং কাদের উদ্দেশে বলছেন? যখন বলে তখন অন্য অর্থ দাঁড়ায়।
এসব বলে শঙ্কা বা রঙ সিগন্যাল ছড়ানো উচিত নয়। মানুষ এমনিতেই শঙ্কায় আছে। রঙ সিগন্যালের তো অভাব নেই। আমি মনে করি, স্বস্তি ফিরে আনতে এসব পরিহার করা দরকার। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারে বসে অনেক কিছুই বলা যায় না।
সাপ্তাহিক : পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানাল কমিশন। পুলিশের সাড়া মিলবে?
এম সাখাওয়াত হোসেন : কমিশন বলছে, কিন্তু পুলিশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে কীÑনা, তার ফলোআপ রাখার কথা। অ্যাকশন কী, তা দেখতে হবে। প্রশাসনের উপর নির্বাচন কমিশনের কতখানি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তা বুঝতে হলে প্রচারের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সাপ্তাহিক : পুলিশ পক্ষপাত আচরণ করছে বলে বিরোধী পক্ষের অভিযোগ। তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। আপনি কী মনে করছেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : বিএনপি অফিসের সামনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি নিয়ে যা ঘটল, তার তদন্ত করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। অথচ নির্বাচন কমিশন তদন্ত করতে চিঠি দিল পুলিশকেই। পরে আবার কমিশন ভুল স্বীকার করল।
পুলিশ এখনও রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার তফসিল ঘোষণার পর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টিও পুলিশের জন্য বুমেরাং হবে।
সাপ্তাহিক : কেন এমনটি মনে করছেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : এখন অস্ত্র বা মাদক নিয়ে অভিযানের প্রসঙ্গ আসল কেন? সারা বছর কী করেছে পুলিশ? এসব অভিযানে এ সময় রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হবে। যা সমাজে আরও অস্থিরতা তৈরি করবে।
বিশেষ কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযান হতেই পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে অভিযান পরিচালনা করলে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা নয়। অথচ পুলিশ এখন পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকার কথা। এখন একজন ওসি থেকে শুরু করে আইজিপি পর্যন্ত সবাই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
অস্ত্র উদ্ধার, মাদক উদ্ধার নিয়ে পুলিশকে পরিকল্পিতভাবে ব্যস্ত রাখলে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে নির্বাচনে জটিলতা দেখা দেবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে প্রতিনিয়ত। কোনো প্রতিকার মিলছে না। অথচ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে।
সাপ্তাহিক : পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে কী হতে পারে?
এম সাখাওয়াত হোসেন : ইতোমধ্যেই আমরা নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা টের পাচ্ছি। প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বিশৃঙ্খলা বাড়বে। জোটবদ্ধ হলেও অসংখ্য দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। প্রচার-প্রচারণার সময় কখন কী ঘটবে, তা বলা মুশকিল। পুলিশ যদি সঠিক ভূমিকা রাখতে না পারে তাহলে নির্বাচনের ওপর প্রভাব পড়বে।
নিরাপত্তা নিয়ে ভয় থাকলে মহিলা বা দুর্বল চিত্তের ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে চাইবেন না। নিরাপত্তা কোন কাঠামোতে নিশ্চিত করা হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এখন পর্যন্ত আমরা নির্বাচন কমিশনের নিরাপত্তা বিষয়ে কাঠামোগত কোনো পরিকল্পনা লক্ষ্য করতে পারিনি।
আগে নিরাপত্তা নিয়ে এত জটিলতা ছিল না। প্রয়োজনও পড়েনি। কিন্তু এখন নিরাপত্তার হুমকি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়টি প্রধান গুরুত্ব পায়।
সাপ্তাহিক : এখন প্রয়োজন...
এম সাখাওয়াত হোসেন : মানুষ তো পুলিশের ওপর ভরসা রাখতে পারছে না। পুলিশ নিজে থেকেই প্রিজাইডিং অফিসারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের তথ্য সংগ্রহ করছে। অথচ নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা জানেন না। এই না জানাও তো নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতা। পুলিশের ওপর মানুষ বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। এ কারণেই নিরাপত্তা নিয়ে কমিশনকে বাড়তি ব্যবস্থা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
সাপ্তাহিক : পুলিশের ওপর বিশ্বাসের যে ঘাটতি, তা এই এক মাসে পূরণ করা সম্ভব?
এম সাখাওয়াত হোসেন : তা সম্ভব হবে না। কারণ বড় ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। এই ক্ষতিপূরণের জন্য দায়িত্ব নেয়ার পরেই কমিশনকে কাজ করা উচিত ছিল। সে উদ্যোগ তারা নেয়নি।
নির্বাচনের মূল আয়োজন হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে এই নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারলে বাকি নির্বাচনগুলোও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সাপ্তাহিক : নির্বাচন বিতর্ক আগেও ছিল?
এম সাখাওয়াত হোসেন : ছিল বটে। তবে এখনকার মতো ভয়ঙ্কর বিতর্ক ছিল না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তার প্রত্যেকটা নিয়েই বিতর্ক আছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আগে কখনো পড়েনি।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন চাইলে কমিশন বন্ধ করে দিতে পারত। দুই-একটি নির্বাচন বাতিল করার মতো যথেষ্ট উপাদান ছিল। করেনি।
সাপ্তাহিক : বন্ধ করলেই কি সমাধান?
এম সাখাওয়াত হোসেন : অন্তত উদাহরণ হয়ে থাকত। মাগুরার উপ-নির্বাচনের ঘটনায় তো বাংলাদেশের রাজনীতির ধারারই পরিবর্তন হলো। ওই সময় যদি কমিশন নির্বাচনটা বন্ধ করে দিত, তাহলে হয়তো বাংলাদেশকে আজ এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।
সাপ্তাহিক : ঐক্যফ্রন্টের অগ্রযাত্রা সরকারের জন্য কতটুকু চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারছে বলে মনে করেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : আমি মনে করি, ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা সরকারের জন্য ইতিবাচক। সরকারে দৃশ্যমান স্বস্তি মিলছে বলেও মনে করি। কারণ গত পাঁচ বছর সরকার চাপে ছিল। প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এটি সরকারের জন্য সুখের ছিল না।
ঐক্যফ্রন্ট গঠন হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছিল। আমরা অবশ্য সংলাপেরও আয়োজন দেখলাম। যদিও এর ফলাফল নিয়ে তেমন প্রত্যাশা ছিল না। কিন্তু এমন আয়োজন রাজনীতির জন্য ইতিবাচকই বটে।
সাপ্তাহিক : কিন্তু সংলাপ তো আপাতত ব্যর্থ। এমন আয়োজনে সার্থকতা কী?
এম সাখাওয়াত হোসেন : বৈরী মনোভাবসম্পন্ন দুটি পক্ষ আলোচনায় বসেছে, এটিই সার্থকতা। দাবি মানলে এক হিসাব, না মানলে আরেক হিসাব। দাবি না মানলে বিরোধী পক্ষ সরকারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ পাবে।
সাপ্তাহিক : এই চাপ আগেও ছিল। সরকার পাত্তা দেয়নি।
এম সাখাওয়াত হোসেন : বিরোধী পক্ষ নিজেরাও জানতো সরকার এসব দাবি মানার অবস্থায় নেই। বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারলে এসব মানবে কেন? বিরোধী জোট সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি।
কিন্তু দাবি না মানলেও তো সুষ্ঠু ভোট হতে হবে। কারণ সরকারকে তো যে কোনো একটি পথ অবলম্বন করতে হবে। সবসময় একই কৌশলে ক্ষমতায় থাকা যায়, তা মনে করার কোনো কারণ নেই।
আর প্রধানমন্ত্রী তো নিজেই বারবার বলছেন, নির্বাচনে ফল যাই আসুক আমি মেনে নেব। তিনি ভোট সুষ্ঠু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন বারবার। ফলাফল কী হয় সেটা পরের হিসাব, কিন্তু সরকার এই সংলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে বাড়তি চাপে আছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু করা নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব হলেও একক নয়।
সাপ্তাহিক : নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে?
এম সাখাওয়াত হোসেন : ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর সরকারও খুব স্বস্তিতে ছিল না। এ কারণেই আমি মনে করি, সরকারের সঠিক উপলব্ধি হয়েছে।
আর নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বাংলাদেশ পথ হারাবে। সমাজে অস্বস্তি রয়েছে তা আপনি-আমি যতটা উপলব্ধি করছি তার চাইতে বেশি উপলব্ধি করছে সরকার।
বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন কোনো দেশ না। আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলতে হয়। গার্মেন্ট পোশাকের ওপর আমাদের অর্থনীতি নির্ভর করে। শান্তি রক্ষা মিশনে হাজার হাজার সেনা বাইরে। লাখ লাখ প্রবাসী বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। তাই বিশ্বকে অস্বীকার করে চলার উপায় নেই।
বাংলাদেশ এখন ১৯৭৫, ১৯৮১ বা ১৯৯১ সালের জায়গায় নেই। ২০১৮ সালের বাংলাদেশ নিয়ে আপনাকে সুস্থ চিন্তা করতে হবে। গতবার মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবারে প্রত্যাশা করছে ভোট দেয়ার। সেই ভোট দেয়ার অধিকার যদি বারবার হরণ করা হয়, তাহলে তা সরকারের উপরেই বর্তাবে। এই অপবাদ থেকে সরকার রেহাই পাবে না।
সাপ্তাহিক : এই প্রশ্নে উগ্রবাদ ...
এম সাখাওয়াত হোসেন : জঙ্গিবাদের এক ধরনের ঢেউ থাকে। আল-কায়দা এবং তালেবানের সময় আমরা ঢেউ দেখলাম। তবে সেই ঢেউ আমাদের এখানে স্থায়ী রূপ পাবে তা মনে করি না। এখানে ধর্মীয় উগ্রবাদ টেকসই হবে না। এখানকার মানুষ ধার্মিক কিন্তু ধর্ম নিয়ে উম্মাদনা বিশ্বাস করে না।
তবে স্বাধীনতার সব রাস্তা বন্ধ হলে যে কোনো ঘটনাই ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে শুধু ধর্ম নয়, যে কোনো চেতনা থেকেই উগ্রবাদের বিস্তার ঘটতে পারে। সে উগ্রবাদ ডান বা বামপন্থা থেকেও জন্ম হতে পারে। রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে চরমপন্থিরা সুযোগ নিতেই পারে।
সাপ্তাহিক : শঙ্কার জায়গা থেকে অনেকেই নির্বাচন না হওয়ার কথাও বলছেন। আপনি কী বলবেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : আমি তা মনে করি না। নির্বাচন না হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। দেশি-বিদেশি এমন কোনো কারণ তৈরি হয়নি যে নির্বাচন বিলম্ব হতে পারে। নির্বাচন হবেই।
সাপ্তাহিক : ১/১১-এর পর নির্বাচন পিছিয়ে গেল। আপনারা দুই বছর পর নির্বাচন দিলেন।
এম সাখাওয়াত হোসেন : ১/১১ কী কারণে তৈরি হয়েছিল, তা সবারই জানা। সেই প্রেক্ষাপট এখন নেই। আর দুই বছর পরে হলেও তো নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন না হলে অন্য শক্তি আসলে তো সংবিধানের ওপর ভর করে আসবে না। কিন্তু বাংলাদেশে এখন পরিস্থিতি আগের মতো নেই।
সাপ্তাহিক : অতীতের ‘পরিস্থিতি’ তো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই তৈরি হয়েছে।
এম সাখাওয়াত হোসেন : এমন পরিস্থিতি কারও জন্যই শুভকর না। আর রাজনীতিবিদরা চাইবে না অন্য কোনো শক্তি ক্ষমতায় আসুক। এ কারণেই নির্বাচনেই সমাধান। বিশ্বের কাছেও এক ধরনের প্রতিজ্ঞা করা আছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য।
সাপ্তাহিক : এবারের নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপ কেমন প্রত্যক্ষ করছেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : ২০১৪ সালে যেভাবে হস্তক্ষেপ করেছিল, এবার তা করবে বলে মনে করি না। সময় অনেক গড়িয়েছে। গোপনে কী হচ্ছে তা ভিন্ন বিষয়, তবে এখন প্রকাশ্যে বলছে তারা বিশেষ কোনো দলের সঙ্গে নেই।
সাপ্তাহিক : অনেকেই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টকে ভারতের ‘বি টিম’ বলে মনে করছেন। এ নিয়ে আপনার অভিমত কী?
এম সাখাওয়াত হোসেন : এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
সাপ্তাহিক : সংকট উত্তরণে আপনার পরামর্শ কী?
এম সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা এবং কার্যবিধি রয়েছে, তা যথাযথ প্রয়োগ করলেই সমাধান মিলবে।
নির্বাচন কমিশনকে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করার কথা। যদি না করে তাহলে কমিশন জনগণকে বোঝাতে পারবে। কমিশন দায় এড়াতে পারবে।
সাপ্তাহিক : নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা যথেষ্ট বলে মনে করেন?
এম সাখাওয়াত হোসেন : যতটুকু আইন আছে, তার প্রয়োগ করতে পারলে ভোট সুষ্ঠু হবে। তবে আমি মনে করি রিটার্নিং অফিসারের সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার। একজনের অধীনে একাধিক নির্বাচনী আসন থাকা মানে পক্ষপাতের ঝুঁকি বাড়ানো। একটি জেলায় একাধিক রিটার্নিং অফিসার থাকলে ভারসাম্য থাকে, জবাবদিহিতা থাকে। ভারতসহ উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে এ ধরনের নিয়োগ করা হয়। বাংলাদেশেও এ ধরনের পরিবর্তন সম্ভব। এর জন্যে আইনের পরিবর্তনের প্রয়োজনও নেই। আরপিও-তে বিধান রয়েছে। অথচ আমরা এখনও ঔপনিবেশিক রীতি থেকে বের হতে পারিনি।

image
  • Aimer
  • Amour
  • HaHa
  • Sensationnel
  • Triste
  • En colère