সময়টা ১৯৭৫।
মানুষটার নাম খলিলুল্লাহ।
তার পরিচয় তিনি একজন মানুষখেকো। মৃত মানুষ খেতে তার ভালো লাগে ভীষন। দু’সপ্তাহ পর পর মানুষের মাংস না খেতে পেলে একেবারে দিশেহারা হয়ে যায় তার সমস্ত দেহ মন।কলিজা আর তেল তার ভীষণ পছন্দের।তবে সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে উরুর নরম তুলতুলে মাংসগুলো কচকচ করে চিবিয়ে খেতে।
মরা মানুষের মাংস খাবার শুরুটা ঠিক কবে হয়েছিলো,তা মনে নেই তার।তবে ছোটবেলার বন্ধু রবি ডোমের হাত ধরেই সূচনা হয়েছিলো তার মৃত মানুষের মাংস খাবার ব্যাপারটির।লালবাগ এলাকা থেকে প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলের মর্গে আসত সে। রবি ডোমের বাবা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রথম ডোম। সে রবির বাবাই খলিলুল্লাহ ও তার ছেলেকে প্রথম মরা মানুষের মাংস খেতে দিত আদর করে । শখ করে নরমাংস খেতে খেতে একসময় ভয়ঙ্কর নেশায় পরিনত হয় সে জিনিস।মাংস খেতে না পেলে কেমন যেনো পাগলের মতো হয়ে যেতো ওরা।
একসময় রবি ডোম নরমাংস খাওয়া ছেড়ে দেয়। কিন্তু খলিলুল্লাহ তা ছাড়তে পারেনি। মানুষের মাংসের লোভে সে ছুটে যেতো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানে গোপাল ডোম ও সোনা ডোম তাকে মরা মানুষের মাংস খেতে দিতো।ভয়ঙ্কর এই উন্মাদ তার খালা মমিনাকে একবার খাসির মাংস বলে মানুষের মাংস রান্না করে খাইয়ে দিয়েছিলো।
নরমাংস খাবার পাশাপাশি আর একটা ভয়ঙ্কর নেশাও ছিলো খলিলুল্লার।কাফনের কাপড় চুরি করতো সে। ঢাকার বিভিন্ন কবরস্থান থেকে কবর খুঁড়ে কাপড় এনে তা মৌলভীবাজারের কাছাকাছি পুরনো কাপড়ের দোকানে বিক্রি করে দিতো। তারপর কাপড় বিক্রির টাকা দিয়ে স্বাভাবিক খাবার কিনে খেতো।
১৯৭৫ সালের ৩ এপ্রিল যখন প্রথমবার পত্রিকায় এ ভয়ঙ্কর মানুষখেকোকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিলো ,তখন ভয়ঙ্কর আতঙ্কে কেঁপে উঠেছিলো বিশ্ববাসী। অদ্ভূত এক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিলো চারপাশে।এবং টনক নড়েছিলো কর্তৃপক্ষের। পরেরবার যখন খলিলুল্লাহ নরমাংসের নেশায় মর্গে আসে তখন হাসপাতাল কর্মচারীরা তাকে কপ করে ধরে ফেলে। তারপর তাকে হাজির করা হয় হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক কর্নেল এম এল রহমানের কক্ষে । কর্নেল সাহেব তখন দ্রুতগতিতে ডেকে পাঠান কলেজের অধ্যক্ষ ডা. এম এ জলিল, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সামাদসহ আরো কয়েকজন মানসিক বিশেষজ্ঞকে। তাঁরা খলিলুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে আসে তার মাংসখেকো হবার ইতিহাস। যা শুনে শিহরিত হয়ে যায় সবাই ভীষণভাবে।
হতবাক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালের রান্নাঘর থেকে এনে দিলো মুরগির কাঁচা মাংস।এবং উপস্থিত সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রায় সাথে সাথেই মুরগির কাঁচা মাংস কচ কচ করে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে সে।
এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাথে সাথেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।খলিলুল্লাহকে আর রাখা যাবে না জনসমক্ষে। হয়তো সে সুযোগ পেলে জ্যান্ত মানুষের ওপরও ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।
এ আশঙ্কায় ডাকা হলো পুলিশকে। পুলিশ খলিলুল্লাহকে বন্দি করে নিয়ে গেলো রমনা থানায় । তারপর শুরু হলো আবার নতুন করে পুলিশি জেরা। পুলিশকে ও দারুণ হতবাক করে দিলো এ মাংসখেঁকো।সে দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা দিলো : ” সে মানুষের মাংস খায় এবং ভবিষ্যতেও খাবে।”
খলিলুল্লাহ যে একজন জটিল মানসিক রোগী , এ ঘোষণার পর নিশ্চিত হয়ে যায় পুলিশ।তারপর তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় পাবনায়।
পাবনার চিকিৎসায় ভয়ঙ্কর উন্মাদ থেকে মোটামুটি সুস্থ হয়ে সে ফিরে আসে আবার স্বাভাবিক জীবনে। তাকে প্রায় সময়ই দেখা যেতো আজিমপুরের গোরস্থানে।
কলিজাখেকো বলে কেউ তাকে কাজ কিংবা আশ্রয় দিতো না। অনেকে শারীরিকভাবে আঘাতও করেছে।দিয়েছে একরাশ লান্ঞ্ছনা। তাই শুধু মাত্র বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে কবরস্থানকে বেছে নিয়েছিলো সে। মরা মানুষের মাংসের লোভে নয়, শুধু নিজেকে সমাজ থেকে দূরে রাখার জন্য,একটু খানি সুখ এবং শান্তির সন্ধানে।
তবে শেষ বয়সটা খুব একটা সুখে কাটেনি তার।নানান রকম লাঞ্ছনা সইতে হতো তাকে এবং তার পরিবারকে।মৃত্যুর আগে তার জীবনটা হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। কয়েক বছর নানান রোগে ভুগে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা যায় এ ভয়ঙ্কর লোকটি। টাকার অভাবে বাবার চিকিৎসা করাতে পারেনি তার ছেলে । তারপর একসময় ২০০৫ সালের কোন এক ভরদুপুরে মুখে পানি এসে হাত-পা ফুলে মারা যান তিনি। এবং এভাবেই শেষ হয়েছিলো সত্তর দশকের এক ভয়াবহ মানুষখেকোর গল্প।
Md Siam
Yorum Sil
Bu yorumu silmek istediğinizden emin misiniz?
Md Jahidul Islam Shakil
https://happymanallbd.blogspot.....com/2020/04/
bd-shop
Yorum Sil
Bu yorumu silmek istediğinizden emin misiniz?